খড়্গপুরে শুভেন্দুর ‘এক নেতা’ বার্তা, মোদীর সভায় দিলীপের উপস্থিতি ঘিরে জল্পনা

বঙ্গ বিজেপির অন্দরের টানাপোড়েন যেন থামার নয়। নতুন রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য দিলীপ ঘোষকে দলে সক্রিয় করার চেষ্টা করলেও, দিলীপ এবং শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধ প্রকাশ্যে চলে আসছে। একদিকে দিলীপ পরোক্ষভাবে বর্তমান নেতৃত্বের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, অন্যদিকে শুভেন্দু তার ‘শক্ত ঘাঁটি’ খড়্গপুরে দাঁড়িয়ে দিলীপকে ইঙ্গিত করে ‘এক নেতা’র বার্তা দিয়েছেন। এই রাজনৈতিক দ্বৈরথ আসন্ন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দুর্গাপুরের সভা ঘিরে আরও জল্পনা বাড়িয়ে তুলেছে।

দিলীপের খোঁচা: “আমার আমলে এসেছিলেন, তাহলে দল কেন এগোলো না?”
দলের রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর শমীক ভট্টাচার্য দিলীপ ঘোষকে দলে সক্রিয় করতে উদ্যোগী হয়েছেন। দিলীপ ইতিমধ্যেই দিল্লিতে গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন এবং আগামী ১৮ই জুলাই দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাতেও তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে এই সব উদ্যোগ সত্ত্বেও, দিলীপের ভেতরের টানাপোড়েন যেন মেটার নয়। এদিনই তিনি কারও নাম না করে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, “আমার আমলে অনেকেই দলে এসেছেন। তারপর থেকে দল কেন বাংলায় এগোতে পারল না, সেই প্রশ্ন সেই সব নেতাদের করা হোক।” এই মন্তব্য সরাসরি শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

খড়্গপুরে শুভেন্দুর ‘এক নেতা’ স্লোগান: দিলীপকে নিশানা?
দিলীপ ঘোষ যখন এই মন্তব্য করছেন, ঠিক তখনই তারই একসময়ের শক্ত ঘাঁটি খড়্গপুরে গিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তার বার্তা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট, “আপনারা খালি একটা কথা বলছি, মনে রাখবেন। আমাদের একটাই প্রতীক পদ্ম। একজনই নেতা নরেন্দ্র মোদি। মাঝখানে আর কেউ নেই…কেউ নেই…কেউ নেই।” শুভেন্দু সরাসরি কারও নাম না নিলেও, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, খড়্গপুরে দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য করে তিনি আসলে দিলীপকেই বিঁধেছেন, কারণ দিলীপ ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে খড়্গপুরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত এবং সেখানে তার অনুগামী সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের নগ্ন চিত্র: কর্মসূচিতেও সমন্বয়হীনতা
এর আগে এই খড়্গপুরেরই বিধায়ক ছিলেন দিলীপ ঘোষ। ২০১৯ সালে তিনি সাংসদ হলেও রেল শহরে বিজেপির সংগঠনের রাশ এখনও অনেকটাই তার হাতে বলে মনে করা হয়। তবে খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিলীপের সংঘাত বিজেপির অস্বস্তির কারণ। হিরণ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত, এবং এদিনও শুভেন্দুর কর্মসূচিতে তিনি তার পাশেই ছিলেন।

এদিন খড়্গপুরে শুভেন্দুর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেও বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। খড়্গপুরে বিজেপির ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’য় খোদ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা উপস্থিত থাকলেও, সেই কর্মসূচির কথা নাকি জানতেনই না দিলীপ ঘোষ ঘনিষ্ঠ দলের জেলা সভাপতি সমিত মণ্ডল। শুভেন্দু অধিকারী এবং খড়্গপুর শহরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় যখন ওই কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন সাংগঠনিক বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন দলের জেলা সভাপতি। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বঙ্গ বিজেপির অন্দরে নেতৃত্ব নিয়ে সংঘাত এখনও তীব্র আকার ধারণ করে আছে, যা দলের একতা এবং ভবিষ্যতের উপর প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করছে।