মাত্র ১৮ মাস বয়সে ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’ জয়, হাওড়ার কন্যার বিরল প্রতিভা

ভারতবর্ষ শুধু বিস্ময়ের দেশ নয়, মেধারও দেশ। স্বামী বিবেকানন্দ থেকে রামানুজন, জাকির হোসেন থেকে পিকাসো— যুগে যুগে অনেক ‘চাইল্ড প্রডিজি’ বা বিস্ময় শিশু এই মাটিকে গর্বিত করেছে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হাওড়ার উলুবেড়িয়ার কাশমূল গ্রামের মাত্র এক বছর ছয় মাস বয়সী সুলতানা, যে তার বিরল প্রতিভা দিয়ে জয় করে নিয়েছে ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এর খেতাব। এই ছোট্ট বয়সেই সে হয়ে উঠেছে দেশের সেরা।
১৮ মাসের সুলতানার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা
সুলতানার ক্ষমতা সম্পর্কে জানলে যে কেউ বিস্মিত হবেন। এইটুকু বয়সেই সে মানব শরীরের দশটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নাম গড়গড় করে বলতে পারে। এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যা বাংলা এবং ইংরেজিতে অনর্গল বলতে পারা তার আরেকটি দক্ষতা। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এইটুকু বয়সেই সুলতানা ৭০টি ইংরেজি শব্দ বাংলায় পরিষ্কার উচ্চারণে অনুবাদ (ট্রান্সলেট) করতে পারে!
মায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও সুলতানার প্রখর স্মৃতিশক্তি
কিন্তু কীভাবে এই অসম্ভব সম্ভব হলো? এর পেছনের মূল কৃতিত্ব সুলতানার মা আকলিমা খাতুনের। পেশায় প্রাইভেট স্কুল শিক্ষিকা আকলিমা জানিয়েছেন, তিনি খেলার ছলেই মেয়েকে এই সবকিছু শিখিয়েছেন। আর সুলতানা তার ‘কম্পিউটার মেমোরি’তে গেঁথে নিয়েছে এই শিক্ষা। সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত গান ‘ঘরে আছে পোলাপান এক খান, কচি তারা কথা ফোটে নাই’ যেন সুলতানার ক্ষেত্রে মিথ্যে প্রমাণ হয়েছে। কারণ, সুলতানার মা জানিয়েছেন, মাত্র ১১ মাস বয়সেই সুলতানা কথা বলতে শিখেছে, এবং তার উচ্চারণও বেশ স্পষ্ট। আকলিমা এবং সুলতানার বাবা মেহতাবুদ্দিন মোল্লা প্রথম থেকেই সুলতানার এই প্রখর স্মৃতিশক্তি লক্ষ্য করেছিলেন।
আকলিমা আরও জানিয়েছেন যে, তিনি সুলতানাকে সঙ্গে নিয়েই স্কুলে যান। সেখানে অন্যান্য বাচ্চাদের সঙ্গে সুলতানাও তার প্রখর স্মৃতিশক্তিতে স্কুলের শিক্ষা আত্মস্থ করে নেয়। কলম ধরতে না শিখেই লেখা শুরু করা সুলতানা এখন বাংলা মাসের নাম শিখছে।
গিনেস বুকের স্বপ্ন ও ইন্ডিয়া বুকের স্বীকৃতি
সুলতানার এই জন্মগত ক্ষমতা দেখে তার বাবা-মায়েরও ইচ্ছে হয়েছিল তার নাম গিনেস বুকে নথিভুক্ত করার। সেই অনুযায়ী গত ১৭ই জুন তারা ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’-এর ফর্ম পূরণ করেন। গিনেস বুক সংস্থা সুলতানার আশ্চর্য ক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে কিছু সাম্প্রতিক ভিডিও চেয়েছিল। সেই ভিডিওগুলি দেখেই ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস’ সংস্থা ২০শে জুন তারিখে সুলতানাকে যোগ্য হিসেবে নির্বাচিত করে। অবশেষে আজ, ১৫ই জুলাই, সুলতানার হাতে এসে পৌঁছেছে এই বিশেষ পুরস্কার। স্বভাবতই আকলিমা এবং মেহতাবুদ্দিন এই একরত্তি মেয়ের দেশজোড়া খ্যাতিতে ভীষণ উচ্ছ্বসিত।
ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন
আকলিমা জানিয়েছেন, তারা মেয়ের প্রতি আরও যত্ন নেবেন এবং চেষ্টা করবেন সুলতানা যেন তার ভবিষ্যৎ জীবনে দেশের গর্ব হতে পারে। সুলতানা বড় হবে, ভবিষ্যতে কোন পথে হাঁটবে তা সময় ঠিক করবে। কিন্তু এই একরত্তি মেয়ের প্রখর স্মৃতিশক্তি এবং তার চেয়েও বেশি আকলিমা ও মেহতাবুদ্দিনের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আসলে পৃথিবীতে কিছু ঘটনার ঠিক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। সুলতানা তেমনই এক বিস্ময় বালিকা, ভারতবর্ষের বুকে এক বিরল শিশু।