আসানসোলে রহস্যজনক ঘটনা, মা ও পোষ্যদের মৃতদেহ উদ্ধার, হাতের নলি কাটা অবস্থায় ছেলে হাসপাতালে

পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল দক্ষিণ থানার সুমথপল্লি এলাকায় এক মর্মান্তিক ও রহস্যজনক ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বাড়িতে মৃত অবস্থায় পড়েছিল মা এবং পোষা তিনটি সারমেয়ের দেহ। ঠিক পাশেই হাতের নলি কাটা অবস্থায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় পড়ে ছিলেন ছেলে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ঋণের বোঝা এই ঘটনার কারণ হতে পারে বলে অনুমান করছে পুলিশ।

মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ছেলে
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত বৃদ্ধার নাম যুথিকা দাস (৭২)। তার ছেলে অরিন্দম দাস (৪৫)-কে হাতের নলি কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি আসানসোল জেলা হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, অরিন্দম মা এবং পোষ্যদের বিষ খাইয়ে নিজে হাতের নলি কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ঋণের অত্যধিক চাপ সহ্য করতে না পেরেই তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই ঘটনায় অরিন্দম দাসের বাড়িতে ভাড়া থাকা এক দম্পতিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

বন্ধুদের মোবাইলে ‘নোট’: চাঞ্চল্যকর ইঙ্গিত
স্থানীয় সূত্রে খবর, অরিন্দম দাস সুমথপল্লি এলাকায় মায়ের সঙ্গে থাকতেন। পরিবারে এই দু’জন ছাড়া ছিল তিনটি পোষা সারমেয়। অরিন্দমের বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন এবং তার এক পিসিও প্রয়াত। সোমবার রাত পর্যন্ত এই পরিবার থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, অরিন্দম তার বন্ধুদের মোবাইলে একটি ‘নোট’ পাঠান। সেই নোট পেয়ে বন্ধুরা তার বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন, মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অরিন্দমের মা যুথিকা দাস। ঘরের মধ্যেই তিনটি পোষা সারমেয়ও মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। আর ঘরের মেঝেতে হাতের নলি কাটা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অরিন্দম। পরে পুলিশ এসে দ্রুত অরিন্দমকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠায়। পাশাপাশি, যুথিকা দেবী এবং তিনটি সারমেয়ের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

ঋণের বোঝাই কি মূল কারণ? প্রতিবেশীদের বয়ান
প্রতিবেশী দীপঙ্কর বিশ্বাসের কথায়, অরিন্দমের পরিবার ঋণে জর্জরিত ছিল। তবে কী কারণে এত ঋণ হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়। তিনি জানান, অরিন্দম তার বাড়ির নিচের তলা এক দম্পতিকে ভাড়া দিয়েছিলেন। সেই ভাড়াটে নাকি বাড়িটি কেনার জন্য কিছু অগ্রিম টাকাও দিয়েছিল। পরে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং ভাড়াটে সুদসহ অগ্রিম টাকা ফেরত চান। অরিন্দম সেই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সুদের কারবারিদের কাছ থেকে আরও ধার করেন। ফলে সুদের উপর সুদের বোঝার চাপে অরিন্দম মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলেই দাবি প্রতিবেশীদের।

দীপঙ্কর বিশ্বাস আরও বলেন, “ওই ভাড়াটে দম্পতি ক্রমাগত অরিন্দমের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল। তার ফলেই সম্ভবত অরিন্দম মাকে বিষ খাইয়ে নিজের জীবন শেষ করতে চেয়েছিলেন।”

পুলিশি তদন্ত: ‘কিছুটা সুস্থ হলে জানা যাবে’
এই ঘটনার তদন্তে এসেছেন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ধ্রুব দাস। তিনি বলেন, “দু’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এই বাড়ি থেকে। দু’জনের মধ্যে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেছে চিকিৎসকরা। আরেকজনের চিকিৎসা চলছে আসানসোল জেলা হাসপাতালে। তিনি খানিকটা সুস্থ হলে কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তা জানা যাবে। মৃত বৃদ্ধার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এলেও মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। আপাতত এই ঘটনায় এক দম্পতিকে আটক করা হয়েছে।”

আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়
যদি আপনার মধ্যে কখনও আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয় বা আপনার কোনো বন্ধু বা পরিচিত এই সমস্যায় জর্জরিত হন, তাহলে ভেঙে পড়বেন না। জানবেন, এমন কেউ আছে যে আপনার যন্ত্রণা, আপনার হতাশা ভাগ করে নিতে সদা-প্রস্তুত। আপনার পাশে দাঁড়াতে তৎপর। সাহায্য পেতে দিনের যে কোনো সময়ে 044-24640050 এই নম্বরে কল করুন স্নেহা ফাউন্ডেশনে। টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশাল সায়েন্সের হেল্পলাইন নম্বরেও (9152987821) কল করতে পারেন। এখানে ফোন করতে হবে সোমবার থেকে শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে।