জাল আধার কার্ড চক্রের পর্দাফাঁস, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান যোগের সন্দেহে STF-এর জালে ২

জাল আধার কার্ড তৈরির এক বিশাল চক্রের পর্দাফাঁস করল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে এই চক্রের যোগসূত্রের সন্দেহে বীরভূম থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তাদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কীভাবে ধরা পড়লো চক্রের মূল পান্ডারা?
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ই জুন মালদার গাজোল থেকে তিনজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। পুলিশ প্রশাসন জানতে পারে, অবৈধভাবে ভারতে আসা বাংলাদেশিরা কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই ভারতীয় ভোটার ও আধার কার্ড পেয়ে যাচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) ঘটনার তদন্তে নামে।
বেশ কয়েকদিন ধরে ওঁত পেতে থাকার পর রবিবার রাতে এসটিএফের চারজন অফিসার হাওড়া স্টেশনে বোলপুরগামী একটি ট্রেনে করে এক সন্দেহভাজনের পিছু নেয়। বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন পৌঁছতেই শেখ মীরাজ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, ধৃত মীরাজের বাড়ি বীরভূমের পাঁড়ুই থানার যাদবপুর গ্রামে। তাকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসটিএফের অফিসাররা বোলপুর স্টেশনে পৌঁছন এবং সেখান থেকে আবদুল কুদ্দুস ওরফে শেখ মুন্নাকে গ্রেফতার করেন।
সাইবার ক্যাফের আড়ালে জালিয়াতি: ল্যাপটপ ও নথি বাজেয়াপ্ত
জানা গেছে, পাঁড়ুইয়ের কেন্দ্র ডাঙালে রাস্তার উপরেই আবদুল কুদ্দুসের একটি সাইবার ক্যাফে রয়েছে, যেখানে মীরাজ কাজ করত। এসটিএফ অফিসাররা সেই সাইবার ক্যাফেতেও হানা দেন এবং কম্পিউটার, ল্যাপটপ, হার্ড ডিস্ক-সহ একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেন। পরে ধৃতদের সূত্র ধরে বোলপুরের জামবুনিতে গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহের কাছে আরেকটি সাইবার ক্যাফেতে হানা দিয়ে ক্যাফের মালিক ইমরান আহমেদের একটি ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়। ইমরান আহমেদ যদিও দাবি করেছেন, তার ক্যাফেতে আধার কার্ড বানানোর কোনো কাজ হয় না এবং তিনি তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করেছেন।
আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের সন্দেহ: আধার ও OTP পাচার?
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতরা নকল আধার কার্ড তৈরির একটি বড় চক্রের সঙ্গে যুক্ত। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, এই সাইবার ক্যাফের আড়ালে তারা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ভারতীয় আধার নম্বর এবং OTP-এর যোগান দেওয়ার কাজও করত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই সন্দেহেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মোবাইল ফোন এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বৈদেশিক লেনদেনের তথ্যও এসটিএফের অফিসাররা পেয়েছেন, যা এই আন্তর্জাতিক যোগসূত্রের সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করেছে।
ধৃতদের বিরুদ্ধে কঠোর ধারায় মামলা
ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা (১১১ (১,৩,৪,৭), ৩১৮ (৪), ৩১৯ (২), ৩৩৬ (৩), ৩৩৮, ৩৪০ (১,২), ৬১ (২) বিএনএস) সহ তথ্য গোপন ও অপব্যবহার আইন ৬৬ সি, ডি ধারা এবং বিদেশে আর্থিক লেনদেন আইন ২০১৬-এর ১৪ সি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এই ঘটনা দেশের নিরাপত্তা এবং সাইবার সুরক্ষার ক্ষেত্রে এক বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি এই চক্রের মূল উৎস এবং এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে।