বেঙ্গল সাফারি পার্কে তৈরি হচ্ছে পুলিশ ফাঁড়ি,পর্যটক সুরক্ষায় বাড়ছে নিরাপত্তা!

উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র বেঙ্গল সাফারি পার্কে পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত এই পার্কে এবার তৈরি হতে চলেছে একটি পূর্ণাঙ্গ পুলিশ ফাঁড়ি। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট এবং চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে এই মাসেই এই নতুন আউটপোস্ট চালু হওয়ার কথা, যা পার্কে আসা পর্যটকদের জন্য এক স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে।
নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশি তৎপরতা
জানা গেছে, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং পার্ক সংলগ্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বেঙ্গল সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কাছে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই কমিশনারেট এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ির পাশাপাশি, পার্ক ও তার আশপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়াতে বাইক পেট্রোলিং ব্যবস্থাও চালু করা হবে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার সি সুধাকর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণের জায়গা বেঙ্গল সাফারি পার্ক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে আমরা একটি আউটপোস্ট তৈরি করব। আগামী সপ্তাহেই এটি চালু করা হবে।” তিনি আরও জানান, এই আউটপোস্টে একজন অফিসার, দু’জন এএসআই এবং ৫-৬ জন কনস্টেবল মোতায়েন থাকবেন। পার্কের বিশাল এলাকা বিবেচনা করে বাইক পেট্রোলিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
পর্যটন হাবের নিরাপত্তা: এক দূরদর্শী পদক্ষেপ
বেঙ্গল সাফারি পার্কের ডিরেক্টর ই বিজয় কুমার পার্কের ক্রমবিকাশ এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “দু’টি বাঘ নিয়ে টাইগার সাফারি দিয়ে শুরু হওয়া এই পার্ক আজ রাজ্যের অন্যতম পর্যটনের ঠিকানা। বন দফতরের বছরে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা আয় হয় এই পার্ক থেকে।” তিনি জানান, পার্কটিকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ করে তুলতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু এবং হিমালয়ান হসপিটালিটি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল, উভয়েই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। রাজ বসু বলেন, “বেঙ্গল সাফারিকে কেন্দ্র করে একটি ট্যুরিজম হাব তৈরি হয়েছে। আর এই ধরনের হাব তৈরি হলে অনেক অপরাধী বা সমাজবিরোধীদের আনাগোনা শুরু হয়। ফাঁড়ি হলে পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।” সম্রাট সান্যাল পর্যটকদের জন্য আলাদা পুলিশ বিভাগ চালুর দাবি জানান।
বেঙ্গল সাফারির সাফল্যগাথা: বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও প্রজননে অগ্রণী
৩৯৬ হেক্টর জমিতে বিস্তৃত বেঙ্গল সাফারি পার্কের পথচলা শুরু হয়েছিল মাত্র দু’টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (স্নেহাশিস ও শীলা) নিয়ে। বর্তমানে এখানে ৬৫টি প্রজাতির মোট ৮৫২টি প্রাণী রয়েছে, যার মধ্যে ৩৪টি বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির প্রাণীও অন্তর্ভুক্ত। পার্কটি বাঘ ও সিংহ প্রজনন ও সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। দু’টি বাঘ থেকে বর্তমানে পার্কে বাঘের সংখ্যা ১৩টি, এবং সিংহের সংখ্যাও এক বছরে দু’টি থেকে বেড়ে ছ’টি হয়েছে। এছাড়াও, আটটি বাঘকে অন্য চিড়িয়াখানায় পাঠানো হয়েছে, যা পার্কের সফল প্রজনন কর্মসূচিরই ফল।
এই নতুন পুলিশ ফাঁড়ি নিঃসন্দেহে বেঙ্গল সাফারির সুরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে, যা পর্যটকদের জন্য একটি নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করবে এবং একই সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের মর্যাদাও বৃদ্ধি করবে।