আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ দুর্ঘটনা “চার সপ্তাহ আগেই সতর্কতা” ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য!

আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ বিমানের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘিরে বিতর্ক ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির দিকেই আঙুল উঠছে, এবং সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার মাত্র চার সপ্তাহ আগেই এই নির্দিষ্ট মডেলের বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ইন্ডিয়া টুডে-র এক প্রতিবেদন এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আগাম সতর্কতা
প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১৫ই মে, ২০২৫ তারিখে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (CAA) একটি আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এই বিজ্ঞপ্তিতে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার-সহ পাঁচটি বোয়িং বিমানের (৭৩৭, ৭৫৭, ৭৬৭, ৭৭৭ এবং ৭৮৭) জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কিত উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। CAA বিশেষভাবে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (FAA) এয়ারওয়ার্দিনেস নির্দেশিকা (AD) দ্বারা প্রভাবিত বিমানগুলির অপারেটরদের তাদের বিমান পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছিল। FAA নির্দেশিকাটি জ্বালানি শাটঅফ ভালভ অ্যাকচুয়েটরকে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিদিন তা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল।
দুর্ঘটনার তদন্ত ও অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা
১২ই জুন, ২০২৫ তারিখে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট AI-171 দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত থেকে তথ্য পাওয়ার পর প্রধান আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলি তাদের বোয়িং ৭৮৭ বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ লকিং প্রক্রিয়াগুলি পরীক্ষা করা শুরু করেছে বলে একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ১৩ই জুলাই, ২০২৫ তারিখে এতিহাদ এয়ারওয়েজ একটি অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা জারি করে। এই নির্দেশনায় ইঞ্জিনিয়ারদের বোয়িং ৭৮৭ বিমানের লকিং প্রক্রিয়া পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়, বিশেষ করে A6-BLI হিসাবে নিবন্ধিত বিমানটির কথা উল্লেখ করা হয়।
ককপিটে বিভ্রান্তি: ‘আপনি জ্বালানি সরবরাহ কেন বন্ধ করে দিলেন?’
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (AAIB) ১২ই জুলাই, ২০২৫ তারিখে তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা এই দুর্ঘটনার রহস্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। AAIB জানিয়েছে যে, এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলি উড়ানের মাত্র তিন সেকেন্ড পরে ‘RUN’ (চালু) থেকে ‘CUTOFF’ (বন্ধ) অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
AAIB-এর মতে, ককপিট অডিওতে পাইলটদের মধ্যে কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে একজন পাইলট অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করছেন, “আপনি জ্বালানি সরবরাহ কেন বন্ধ করে দিলেন?” যার উত্তরে অন্য পাইলট বলছেন যে তিনি তা করেননি।
বোয়িং ৭৮৭-এর জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচগুলি এমন একটি লকিং সিস্টেম দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে যা অনিচ্ছাকৃত নড়াচড়া প্রতিরোধ করে। সাধারণত, সুইচটিকে জ্বালানি সরবরাহ শুরু করার জন্য সামনের দিকে (RUN) অথবা বন্ধ করার জন্য পিছনের দিকে (CUTOFF) নিয়ে যেতে হয়।
এই আগাম সতর্কতা এবং ককপিটের কথোপকথন দুর্ঘটনার পিছনে যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করছে। প্রশ্ন উঠছে, এয়ার ইন্ডিয়া কি এই আন্তর্জাতিক সতর্কতার বিষয়ে অবগত ছিল এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিল? তদন্ত যত এগোবে, ততই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার নেপথ্যের কারণ আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।