“শৌচাগারের দরজায় নেই ছিটকিনি”-বহিরাগতদের ঢোকার আশঙ্কায় ভুগছেন গৌড়বঙ্গের পড়ুয়ারা

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্রী ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এমন পরিস্থিতিতে এবার নিজেদের সুরক্ষার দাবি তুলে সরব হয়েছেন মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার ফাঁকফোকর থাকার অভিযোগ তুলে তারা কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে ক্লাস রুম পর্যন্ত সর্বত্রই তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষী নেই, এমনকি সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যাও অপ্রতুল। এর ফলে বহিরাগতরা খুব সহজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারছে, যা ছাত্রীদের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

নিরাপত্তাহীনতার পাশাপাশি শৌচালয় নিয়েও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৌচাগারগুলির অবস্থা অত্যন্ত বেহাল। তারা একা শৌচাগারে যেতে ভয় পান। বাধ্য হয়েই কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়, কারণ শৌচাগারের দরজায় কোনও ছিটকিনি নেই, ফলে সেখানেও কোনো নিরাপত্তা নেই। তাদের অভিযোগ, বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেও এই সমস্যার সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

আরজি কর ও কসবার ঘটনার আতঙ্ক:
আর জি কর বা কসবা ল কলেজের মতো ঘটনা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও ঘটে যেতে পারে, এই আতঙ্কে রয়েছেন মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। তাঁদের প্রধান দাবি, শৌচালয়গুলির প্রয়োজনীয় মেরামত করা হোক এবং ক্যাম্পাসে কারা প্রবেশ করছেন, সে বিষয়ে সঠিক ও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা হোক।

পানীয় জল ও আবাসন সমস্যা:
শুধু নিরাপত্তাই নয়, পানীয় জলের সমস্যা নিয়েও ছাত্রীরা সরব হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ঝাঁ চকচকে হোস্টেল ভবন নির্মাণ হলেও সেখানে পানীয় জলের কোনো ব্যবস্থা নেই, এমনকি পর্যাপ্ত থাকার ব্যবস্থাও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের বাইরে বেশি ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে।

কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তি ও রাজনৈতিক চাপানউতোর:
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার অভাব দূর করার চেষ্টা চলছে বলে জানানো হয়েছে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিশ্বজিৎ দাস জানিয়েছেন, নতুন সিকিউরিটি সিস্টেমের জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে, এই ইস্যুতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শুধু ছাত্র-ছাত্রী বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের জেলা সভাপতিও নিরাপত্তার অভাবের কথা স্বীকার করেছেন।

বিজেপি এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, কসবার মতো ঘটনা এখানে ঘটবে না তো, এই আতঙ্কে ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। রাজ্য বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “অবাধে এখানে বহিরাগতরা প্রবেশ করে। শিক্ষা নিয়ে এইরকম অবহেলা সহ্য করা যাবে না, দরকার পড়লে আমরা আন্দোলনে নামব।”

সব মিলিয়ে, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিরাপত্তা এবং মৌলিক পরিষেবাগুলি নিশ্চিত করা এখন কর্তৃপক্ষের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।