হরিয়ানার নতুন রাজ্যপাল বাংলার সুসন্তান অসীম ঘোষ, আশা বাংলার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের

পশ্চিমবঙ্গের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ অসীম ঘোষ হরিয়ানার রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হলেন। সোমবার রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর এই নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক থেকে বঙ্গ বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা অসীম ঘোষের কাঁধে এবার হরিয়ানার গুরুদায়িত্ব।
আনন্দের খবর এল বন্ধুর ফোনে:
অসীম ঘোষ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়ার খবরটি প্রথম জানতে পারেন তাঁর দিল্লির এক বন্ধুর কাছ থেকে। বন্ধু যখন তাঁকে ফোন করে অভিনন্দন জানান, তখনই তিনি বিষয়টি অবগত হন। অসীমবাবু জানান, সকালে তিনি টিভি দেখেননি, তাই খবরটি জানতে পারেননি। বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতদের অভিনন্দনের মাধ্যমেই তিনি এই সংবাদ পান। তবে, রাষ্ট্রপতি ভবন বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে এখনও তাঁর কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক ফোন বা চিঠি আসেনি।
মন পড়ে থাকবে বাংলাতেই:
হাওড়ার স্থায়ী ঠিকানা ছেড়ে এবার অসীম ঘোষের নতুন ঠিকানা হবে হরিয়ানার রাজভবন। কিন্তু তাঁর মন যে এই বাংলাতেই পড়ে থাকবে, সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এক প্রতিক্রিয়ায় অসীম ঘোষ বলেন, “আমি দায়িত্ব নিয়ে হরিয়ানায় যাচ্ছি। তবে, আমার মন এই বাংলাতেই পড়ে থাকবে। আমি আশায় থাকব এই বাংলা আবার তার পুরনো হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরে পাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঋষি অরবিন্দ, স্বামী বিবেকানন্দের বাংলা তাঁর হারিয়ে যাওয়া গর্ব আবার ফিরে পাবে। বাংলার মেয়েরা স্কুলে গেলে, তাঁদের বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তা করবে না। শিল্পে বাংলার হৃত গৌরব ফিরবে। আর এর জন্য সব পক্ষকে একসঙ্গে কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।”
বর্ণময় জীবন ও রাজনৈতিক পথচলা:
১৯৪৪ সালে হাওড়ায় জন্ম অসীম ঘোষের। স্কুলশিক্ষা হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশনে। এরপর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৬ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন, মহারাজা শ্রীশচন্দ্র কলেজেও অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর ছাত্র ও পেশাগত জীবন জুড়ে ছিল যুক্তিবাদী চিন্তা, বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতীয় রাজনীতির প্রতি গভীর আগ্রহ।
১৯৯১ সালে অসীম ঘোষ বিজেপিতে যোগ দেন। প্রথমদিকে দীর্ঘদিন তিনি বিজেপির রাজ্য বুদ্ধিজীবী সেলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে রাজ্য সম্পাদক এবং ১৯৯৮ সালে রাজ্য সহ-সভাপতি হন। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদে ছিলেন। সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমান রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের নির্বাচনের সময় তিনি জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
অন্যান্য রাজ্যপাল নিয়োগ:
উল্লেখ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের উপ-রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বিডি মিশ্র। তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। তাঁর জায়গায় লাদাখের উপ-রাজ্যপাল হয়েছেন কবীন্দর গুপ্তা। গোয়ার রাজ্যপাল নিযুক্ত করা হয়েছে পুষ্পাতি অশোক গজপতি রাজুকে।