সাপের মাঝে থেকে দুই সন্তানের জন্ম! ভারতের জঙ্গলে ৮ বছর লুকিয়ে ছিলেন কেন রাশিয়ান মহিলা?

কর্ণাটকের গোকর্ণা অঞ্চলের রামতীর্থ পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে প্রায় আট বছর ধরে বসবাস করা এক রাশিয়ান মহিলা, নিনা কুটিনা ওরফে মোহি (৪০) এবং তাঁর দুই কন্যা সন্তানকে অবশেষে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০১৬ সাল থেকে বিপজ্জনক জঙ্গল এবং সাপের বাসস্থানের মধ্যে, একটি গুহার নির্জনে তাঁদের এই অলৌকিক জীবনযাপন পুলিশের নজরে আসে। গুহার অভ্যন্তরে দুই সন্তানের জন্ম দেওয়া, তাদের বড় করে তোলা এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় নিমগ্ন থাকা—এই গোটা অধ্যায়টিই সবাইকে বিস্মিত করেছে।
নিনা কুটিনা ২০১৬ সালে ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে এসেছিলেন। কিন্তু আসার পরই তিনি হিন্দু ধর্ম এবং ধ্যান-যোগের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন। তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও, তিনি জনসমাগম এড়িয়ে জঙ্গলের গভীরে একটি গুহায় জীবনযাপন শুরু করেন। সেখানেই তাঁর দুই কন্যা, ছয় বছরের প্রেয়া এবং চার বছরের এমার জন্ম হয়। এই আট বছরে বাইরের জগতের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল প্রায় বিচ্ছিন্ন।
সম্প্রতি পুলিশের রুটিন টহলের সময় গুহার সামনে কিছু অস্বাভাবিক গতিবিধি দেখে পুলিশ কর্মীরা গুহার ভিতরে প্রবেশ করেন এবং নিনা ও তাঁর সন্তানদের খুঁজে পান। গুহার ভিতরে শিবমূর্তি, অন্যান্য হিন্দু দেব-দেবীর ছবি এবং রাশিয়ান ধর্মীয় গ্রন্থ পাওয়া গেছে, যা তাঁদের আধ্যাত্মিক জীবনযাত্রার ইঙ্গিত দেয়।
প্রথম দিকে নিনা গুহা ছেড়ে আসতে রাজি ছিলেন না। তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, “সাপ আমাদের বন্ধু। আমরা ওদের ক্ষতি করি না, ওরাও আমাদের করে না।” কিন্তু ধস এবং স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কার কথা বোঝালে তিনি শেষমেশ গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে রাজি হন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিনা তাঁর সন্তানদের গুহার ভিতরেই ছবি আঁকা, গান, যোগব্যায়াম এবং জপ শেখাতেন। তাঁরা জঙ্গলে খাবার মজুত করতেন এবং মাঝে মাঝে শহরে গিয়ে ফোন চার্জ দিয়ে আসতেন। উদ্ধারের পর দুই শিশুকে একটি আশ্রমে রাখা হয়েছে, যেখানে আলো এবং বিছানা দেখে তারা বেশ খুশি।
আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে নিনা এবং তাঁর দুই কন্যাকে রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে। ভারতের সঙ্গে, বিশেষ করে এই জঙ্গল এবং আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে, নিনার এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হলেও, এই বিস্ময়কর অধ্যায়ের এখানেই আপাতত ইতি টানতে হচ্ছে।