মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে সন্তুষ্ট নন SSC-র চাকরিহারারা, বড় দাবি আন্দোলনকারীদের

যোগ্য চাকরিহারাদের নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাওড়া। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় ধস্তাধস্তি এবং উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। হাওড়ার বিভিন্ন প্রবেশপথে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা, যার ফলে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। অবশেষে, দীর্ঘ টালবাহানার পর ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলকে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে এই বৈঠক নবান্নে না হয়ে শিবপুর পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জন ‘যোগ্য’ শিক্ষক এবং ২ জন অশিক্ষক কর্মীর প্রতিনিধিদল মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু এই বৈঠক শেষে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা। তাদের মূল দাবি, সোমবার রাতের মধ্যেই যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। হুঁশিয়ারি দিয়ে তারা জানিয়েছেন, তালিকা প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না তারা।
আন্দোলনকারী মেহবুব মণ্ডল এবং চিন্ময় মণ্ডল প্রশ্ন তুলেছেন, “তালিকা প্রকাশের কোনো নির্দেশ না থাকলেও, প্রকাশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। তাহলে কেন তৈরি থাকা সত্ত্বেও এই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না?”
বৈঠকের মাঝপথেই মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে মুখ্যসচিব বেরিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। যদিও বৈঠকে সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন, তবুও এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলেই তাদের দাবি। চাকরিহারাদের স্পষ্ট বার্তা, নতুন করে কোনো পরীক্ষায় তারা বসবেন না। তারা জানতে চেয়েছেন, সরকার কেন দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে। তাদের আরও দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
আন্দোলনকারীদের মতে, বৈঠকে মুখ্যসচিব ছাড়াও শিক্ষাসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যসচিব এবং ডিজি উভয়েই বৈঠক ছেড়ে চলে যান। এরপর হাওড়ার পুলিশ কমিশনার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু সরকারের অবস্থান সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট বার্তা না পেয়ে হতাশ হয়েছেন প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর পক্ষ থেকে এই নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর থেকেই এই আন্দোলন চলছে। যদিও সুপ্রিম কোর্ট সকলকেই সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলেনি, তবে প্যানেল বহির্ভূত নিয়োগ, সাদা OMR শিট জমা দিয়ে চাকরি বা র্যাঙ্ক জাম্প করে চাকরিপ্রাপ্তদের ‘দাগি’ ঘোষণা করে তাদের বেতন ফেরতেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের চাকরি ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে বাতিলের পাশাপাশি ওই সময়ের মধ্যেই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর নির্দেশও দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
এরই প্রেক্ষিতে কমিশনের নতুন পরীক্ষা বিজ্ঞপ্তিতে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠলে তা হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ এবং পরবর্তীতে ডিভিশন বেঞ্চও ‘দাগি’ দুর্নীতিগ্রস্তদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেছেন, সরকার দুর্নীতিগ্রস্তদের পক্ষ নিয়ে যোগ্যদের বিপদগ্রস্ত করছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য-অযোগ্যদের তালিকা পেশ করে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে বিনা পরীক্ষায় তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।