মেডিকো লিগ্যাল টেস্টে সম্মতি দেননি নির্যাতিতা, IIM-এর ঘটনা নিয়ে বাড়ছে রহস্য?

কলকাতার জোকা আইআইএম ক্যাম্পাসে তরুণী মনোবিদকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় রাজ্য। শুক্রবার রাতে হরিদেবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও, ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও নির্যাতিতার মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা করানো যায়নি বলে পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, এই পরীক্ষার জন্য নির্যাতিতার সম্মতি প্রয়োজন, যা এখনও মেলেনি। কেন এই সম্মতি মেলেনি, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন তদন্তকারীরা।
লালবাজারের এক আধিকারিক রবিবার বলেন, “ধর্ষণের ঘটনার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব নির্যাতিতার মেডিকো-লিগ্যাল টেস্ট করানো গেলে মামলার ট্রায়ালের সময়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে আমরা নির্যাতিতার সম্মতির জন্য অপেক্ষা করছি। যদি উনি সম্মতি না-দেন, তা হলে সেটাও আমরা আদালতে জানাব। বাদবাকি তদন্তে কী পাওয়া গেল, সেই তথ্যও কোর্টকে লিখিত ভাবে জানানো হবে।”
অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে, সিট গঠন:
আইআইএম, ক্যালকাটার বয়েজ় হস্টেলের ১৫১ নম্বর রুমে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পর শনিবার সেখানকার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র পরমানন্দ মহাবীর তোপ্পান্নাওয়ারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আদালত তাকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে রবিবার ন’সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। তাঁরা অভিযুক্তকে জেরার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয় জানার চেষ্টা করছেন।
রহস্যময় বাবার বয়ান ও অন্যান্য তদন্ত:
তদন্তকারী অফিসারেরা অভিযুক্ত ও নির্যাতিতার মোবাইল পরীক্ষা করে দেখতে চান। ওই যুবক তার মোবাইলে নির্যাতিতার আপত্তিকর ভিডিও ও ছবি তুলে রেখেছিল কি না, তা জানতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে ওই ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চত্বরের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও পরীক্ষা করা হবে।
সবচেয়ে বড় রহস্য তৈরি হয়েছে নির্যাতিতা শুক্রবার রাতে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও, শনিবার তাঁর বাবা সংবাদমাধ্যমের সামনে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তা ঘিরে। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, “কেউ অত্যাচার করেনি, মেয়ে ফিট।” বাবার এই বয়ান বেশকিছু প্রশ্ন ও সংশয়ের জায়গা তৈরি করেছে। তবে তিনি বা নির্যাতিতা যতক্ষণ না পুলিশ বা আদালতের কাছে এসে নতুন করে কোনো বয়ান দিচ্ছেন, ততক্ষণ পুলিশ অভিযুক্তকে জেরার পাশাপাশি টেকনিক্যাল এবং সায়েন্টিফিক এভিডেন্সের উপরে ভরসা করে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মেডিকো-লিগ্যাল টেস্টের গুরুত্ব:
পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে মেডিকো লিগ্যাল পরীক্ষাটা দ্রুত করানো অত্যন্ত জরুরি। এ ক্ষেত্রে নির্যাতিতার যৌনাঙ্গ-সহ শরীরের যাবতীয় আঘাতের পাশাপাশি ভেজাইনাল সোয়াব-সহ প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেই নমুনা ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
ফরেনসিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদীপ ঘোষ বলেন, “মেডিকো লিগ্যাল টেস্ট যত দেরি হবে, প্রমাণ নষ্টের আশঙ্কা তত বেড়ে যাবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার দিন ওই তরুণী যে জামাকাপড় পরেছিলেন, তা-ও সম্পূর্ণভাবে সংগ্রহ করা যায়নি।
অনুত্তরিত প্রশ্ন ও প্রভাবশালীর যোগ?
নির্যাতিতার লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশ মনে করছে, অভিযুক্ত সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের কথা বলে ওই তরুণীকে বয়েজ় হস্টেলে ডেকেছিল। ঠিক কী কারণে তরুণীকে সেদিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল, কেনই বা গেটের লগবুকে তাঁর নাম এন্ট্রি করানো হলো না, হস্টেলের ঘরে তরুণীর উপরে নির্যাতন চালানো হলে আশপাশের অন্য কেউ তা জানতে পেরেছিলেন কি না— এই সব প্রশ্নের আপাতত উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
শনিবার আদালতে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেছিলেন, অভিযুক্ত প্রভাবশালী। প্রভাব খাটিয়ে নির্যাতিতাকে সে ভিতরে নিয়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে আইআইএম-এর ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা জানতে আইআইএম কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে সিট-এর তরফে। ঘটনার জেরে আইআইএম ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অভিযুক্তের প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।