‘কেন দেহ তুলে নিয়ে গেল?’, খেজুরিতে ‘জোড়া খুনের’ প্রতিবাদে ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক শুভেন্দুর

খেজুরি, পূর্ব মেদিনীপুর, ১৪ জুলাই, ২০২৫: পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির ভাঙনমারি গ্রামে দুই ব্যক্তির রহস্যজনক দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুলিশ এটিকে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হিসেবে দেখলেও, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একে “জোড়া খুন” আখ্যা দিয়ে সোমবার ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দেন। শুভেন্দুর ডাকে দিনভর খেজুরিতে ব্যাপক চাপানউতোর, উত্তেজনা ও অশান্তি দেখা গেছে।
এদিন সকাল থেকেই খেজুরি জুড়ে এক থমথমে শূন্যতা বিরাজ করছিল। নিহতদের পরিবারের হাহাকার যেন গ্রাস করেছিল গোটা এলাকাকে। শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা বনধকে বানচাল করার চেষ্টা করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, চলেছে মিছিলও।
এই বনধের মাঝেই তৈরি হয় উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। খেজুরির হেঁড়িয়া, বাঁশগোড়া, কলাগেছিয়া-সহ কয়েকটি জায়গায় সাময়িক উত্তেজনা ও অশান্তি ছড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। বনধ উপেক্ষা করে চলাচলকারী যানবাহনগুলির উপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। একাধিক জায়গায় হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়। রসুলপুর নদীর ফেরি পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। বনধ সমর্থনের অভিযোগে ইতিমধ্য়েই ৮ জন বিজেপি সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে খেজুরি এখন এক বিরাট রাজনৈতিক চাপানউতোরের কেন্দ্রবিন্দু।
এই উত্তেজনা-বনধ-অশান্তির আবহের মধ্যেই পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মিছিল শুরু করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিনের মিছিলেও বিজেপি নেতার মূল হাতিয়ার ছিল সেই ‘সংখ্যালঘু’ প্রসঙ্গ। মিছিল থেকে শুভেন্দু বলেন, “ঘরে বসে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি রাস্তায় করতে হয়। আমি এই ভাবেই ২০১১ সালে পরিবর্তন করেছিলাম। এখানে বিজেপির পক্ষে ৪৬ শতাংশ ভোট এককাট্টা করেছি। হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হন।”
মিছিল শেষে একটি সভাতেও অংশ নেন শুভেন্দু। সেখানে বনধের সমর্থনে বিজেপি কর্মীদের সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুকে তিনি ফের একবার ইঙ্গিতে ‘খুনের ঘটনাই’ বলে দাবি করেন। তাঁর অভিযোগের তীর ছিল ময়নাতদন্তের দিকে। শুভেন্দুর মুখে এক চিকিৎসকের কথাও শোনা যায়। তাঁর দাবি, “এক ডাক্তার ফোন করে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে ফোন করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত হয়েছে বলে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও, যখন অকুস্থলে দেহ পড়েছিল কেন বাড়ির লোককে না জানিয়ে পুলিশ দেহ তুলে নিয়ে গেল?”
নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তাঁর কড়া হুঁশিয়ারি, “যে ভাবে লাঠিতে জয় শ্রী রামের ঝান্ডা লাগিয়েছেন, সেই লাঠি আরও তৈরি করতে হবে। তেল মাখাতে হবে।” সব মিলিয়ে খেজুরির এই জোড়া মৃত্যু ঘটনা আগামী দিনে রাজ্যের রাজনীতিতে আরও উত্তাপ ছড়াবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।