‘বাড়ির লোককে না জানিয়ে কেন দেহ তুলে নিয়ে গেল?’ ‘জোড়া খুনের’ অভিযোগ শুভেন্দুর ও ‘হিন্দু ঐক্যবদ্ধ-র’ ডাক

পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরি ভাঙনমারি গ্রামে গত শনিবার সকালে দুই ব্যক্তির দেহ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ যেখানে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে, সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এটিকে ‘জোড়া খুন’ বলে দাবি করেছেন। এই ‘জোড়া খুনের’ প্রতিবাদে সোমবার তিনি ১২ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছেন, যা খেজুরির পরিস্থিতিকে রীতিমতো অগ্নিগর্ভ করে তুলেছে।
শোকে স্তব্ধ গ্রাম, বনধে উত্তপ্ত পরিস্থিতি
আজ সকাল থেকেই খেজুরিতে এক শূন্যতা বিরাজ করছে। নিহতদের পরিবারের হাহাকার যেন গ্রাস করেছে গোটা এলাকাকে। শুভেন্দু অধিকারীর ডাকা বনধকে বাতিল করার জন্য তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা মিছিল করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
এই বনধের মাঝেই খেজুরির হেঁড়িয়া, বাঁশগোড়া, কলাগেছিয়া-সহ কয়েকটি জায়গায় সাময়িক উত্তেজনা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। ‘বনধ-ভাঙা’ যানবাহনগুলির উপর হামলা চালানো হয়েছে এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। রসুলপুর নদীর ফেরি পরিষেবাও বন্ধ রয়েছে। এমনকি, বনধ সমর্থনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই ৮ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সব মিলিয়ে খেজুরিতে এখন ব্যাপক চাপানউতোর চলছে।
শুভেন্দু অধিকারীর মিছিল ও ‘সংখ্যালঘু’ প্রসঙ্গ
এই উত্তেজনাপূর্ণ আবহে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মিছিল শুরু করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এদিনের মিছিলেও বিজেপি নেতার হাতিয়ার ছিল সেই ‘সংখ্যালঘু’ প্রসঙ্গ। মিছিল থেকে শুভেন্দু দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “ঘরে বসে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি রাস্তায় করতে হয়। আমি এই ভাবেই ২০১১ সালে পরিবর্তন করেছিলাম। এখানে বিজেপির পক্ষে ৪৬ শতাংশ ভোট এককাট্টা করেছি। হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হন।”
‘খুনের’ অভিযোগ ও ডাক্তারকে নির্দেশ দেওয়ার দাবি
মিছিল শেষে একটি সভায় শুভেন্দু বনধের সমর্থনে বিজেপি কর্মীদের সাধুবাদ জানান। পাশাপাশি, তিনি আবারও ইঙ্গিতে ওই দুই ব্যক্তির মৃত্যুকে ‘খুনের ঘটনাই’ বলে দাবি করেন। শুভেন্দুর মুখে এক চিকিৎসকের কথাও শোনা যায়। তিনি অভিযোগ করেন, “এক ডাক্তার ফোন করে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত হয়েছে বলে লিখে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।” তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “যখন অকুস্থলে দেহ পড়েছিল কেন বাড়ির লোককে না জানিয়ে পুলিশ দেহ তুলে নিয়ে গেল?”
শুভেন্দু অধিকারী তার কর্মীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যেভাবে লাঠিতে জয় শ্রী রামের ঝান্ডা লাগিয়েছেন, সেই লাঠি আরও তৈরি করতে হবে। তেল মাখাতে হবে।”
এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়েছে। একদিকে তৃণমূলের বনধ বাতিলের চেষ্টা ও মিছিল, অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীর কঠোর অবস্থান এবং ‘হিন্দু ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান খেজুরির পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এই সংঘাত আগামী দিনে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।