‘বাঙালির হেনস্তা’র প্রতিবাদে রাজপথে মমতা, বিজেপির বিরুদ্ধে ভাষার রাজনীতি ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনা এবং ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে তাঁদের পুশব্যাক করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এই ইস্যুতে আগেই সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তিনি সরাসরি রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী বুধবার, ১৬ জুলাই, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এই প্রতিবাদ মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন।

রবিবার তৃণমূল ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, “আগামী বুধবার দুপুর একটায় কলেজ স্ট্রিট থেকে ডোরিনা ক্রসিং (ধর্মতলা) পর্যন্ত এই প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হবে। হাওড়া, কলকাতা, সল্টলেক-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল কর্মীরা এই মিছিলে যোগ দেবেন। অবশ্যই এই মিছিলের মধ্যমণি হবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও যোগ করেন, “বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে তৃণমূল সুপ্রিমো আগেও এভাবে সক্রিয় হয়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এই দিনে বাঙালিদের হেনস্তার প্রতিবাদ করবে গোটা বাংলা।” তিনি জানান, কেন্দ্রীয় এই মিছিল ছাড়াও ওইদিন দুপুর দুটো থেকে চারটে পর্যন্ত রাজ্যের প্রতিটি জেলায় প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হবে।

সম্প্রতি বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, “ভারত একটি বহু ভাষার দেশ। এখানে নানা ভাষায় মানুষ কথা বলেন। তাহলে বাংলা ভাষা বললে সে বাংলাদেশি হয়ে গেল? বাংলাদেশের মানুষ যেমন বাংলায় কথা বলেন, তেমন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারাও তো বাংলায় কথা বলেন। তাই বলে কি তাঁদের বাংলাদেশি বলে ধরতে হবে? এটা কোথাকার যুক্তি!”

মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, “বিজেপি এখন ভাষার ভিত্তিতেই রাজনীতি করছে। তারা এমনিতেই বাংলার প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে। অথচ বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা খুব দক্ষ ও পরিশ্রমী। নানা রাজ্যে কাজ করতে যান তাঁরা। সেই শ্রমিকদের এখন ‘বাংলাদেশি’ বলে জেলে পুরে দেওয়া হচ্ছে, এটা ভয়ংকর অন্যায়।” শুক্রবারও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছিলেন, “বাংলার মানুষ যদি নিজের দেশেই অনাহূত অতিথির মতো আচরণের শিকার হন, তাহলে বাংলা চুপ করে থাকবে না।”

রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসকদল এই ইস্যুকে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং ভাষার ভিত্তিতে বিভাজনের অভিযোগ তুলে বিজেপিকে কোণঠাসা করাই তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রতিবাদ মিছিলের পর বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।