“ন’মাস আগে উদ্ধার প্রেমিকার দেহ”-একই ফ্ল্যাটে উদ্ধার এবার তরুণের ঝুলন্ত দেহ!

বছর পঁয়ত্রিশের তরুণের ফ্ল্যাটে তাঁর লিভ-ইন পার্টনার তরুণীর রহস্যমৃত্যুর কিনারা হওয়ার আগেই ফের মর্মান্তিক ঘটনা। ন’মাস আগে যে ফ্ল্যাটে গুরুতর আঘাত নিয়ে রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছিলেন মধুরিমা রায় নামে এক তরুণী, এবার সেই একই ফ্ল্যাটে উদ্ধার হলো তার লিভ-ইন পার্টনার বিকাশ দত্তের ঝুলন্ত দেহ।

শুক্রবার সকালে গরফার শহিদনগরে একটি বহুতল আবাসনের চারতলার ফ্ল্যাটে বিকাশের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান তার আত্মীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছর নভেম্বরে কালীপুজোর সময় এই একই ফ্ল্যাটে বিকাশের লিভ-ইন পার্টনার মধুরিমা রায়ের রহস্যমৃত্যু হয়েছিল। আগের রাতে দু’জনে একটি পার্টিতে অংশ নিয়েছিলেন। পরদিন সকালে ফ্ল্যাটের ঘরের খাটে তার দেহ পাওয়া যায়, শরীরে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন।

তদন্তকারীদের ধারণা, মধুরিমা ও বিকাশের মৃত্যুর মধ্যে কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে। মধুরিমার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে বিকাশ ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র। কিন্তু তার আকস্মিক আত্মহননের ফলে তরুণীর মৃত্যুতে অস্বাভাবিক কিছু ছিল কিনা, তা জানা আরও কঠিন হয়ে গেল বলে মনে করছে পুলিশ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মধুরিমার মৃত্যুর সময় বিকাশের মা-ও সেই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি ছিলেন ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী। তবে গত ২৩ জুন তিনিও মারা গিয়েছেন।

পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছিল, বিবাহ বিচ্ছেদের পর মধুরিমা বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। পারিবারিক জমিতে প্রোমোটিংয়ের পর তৈরি হওয়া আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে বিকাশরা থাকতেন এবং মধুরিমা তাদের সঙ্গেই লিভ-ইন করছিলেন। মৃত্যুর আগে বিভিন্ন কারণে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা হতো এবং তাদের সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছিল।

এই টানাপোড়েনের মধ্যেই রহস্যজনকভাবে মধুরিমা মারা যান। তার শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পাওয়ায় মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীতে জানা যায়, সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে তিনি আঘাত পেয়েছিলেন এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার পাকস্থলিতে মদের উপস্থিতিও মিলেছিল। তবে, বেশ কিছু প্রশ্ন তখনও অমীমাংসিত ছিল।

মধুরিমার পরিবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যু সহজে মেনে নিতে পারেনি। তারা প্রশ্ন তুলেছিল—তরুণীকে কি জোর করে মদ খাওয়ানো হয়েছিল? তিনি কি নিজে পড়ে গিয়েছিলেন, নাকি তাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলেছিল? এবং আঘাত গুরুতর হওয়া সত্ত্বেও কেন তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ঘরে রাখা হয়েছিল?

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার আগের দিন রাত ৮টা নাগাদ মধুরিমাকে পুজোর প্রসাদ দিতে এসেছিলেন তার বোন। তখন তিনি দিদিকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেন এবং অনেক ডাকাডাকির পরেও কোনো সাড়া পাননি। ঘরের আলো জ্বালিয়ে তিনি দেখেন দিদি বিছানায় পড়ে আছেন এবং তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেই সময় বাড়িতে বিকাশ এবং তার মা দুজনেই উপস্থিত ছিলেন, তাই স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহের তালিকায় ছিলেন বিকাশ।

স্থানীয় সূত্রে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, ওই তরুণীর মৃত্যুর পর থেকে বিকাশের মা গভীর অবসাদে ভুগছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর বিকাশও ঘর থেকে তেমন বের হতেন না। মধুরিমার মৃত্যুতে এমন কোনো অজানা রহস্য লুকিয়ে ছিল কিনা, যার জন্য বিকাশ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, তা সম্ভবত অধরাই থেকে গেল। এই জোড়া রহস্যমৃত্যু গরফার শহিদনগরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং পুলিশ উভয় ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে।