কলেজ স্ট্রিটে লাঞ্ছিত তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক রাজদ্বীপ মাইতি, ক্ষমা চেয়েও রেহাই নেই; নারী নিগ্রহের অভিযোগ

প্রকাশ্য দিবালোকে কলেজ স্ট্রিটের রাজপথে লাঞ্ছিত হলেন তৃণমূলপন্থী অধ্যাপক নেতা রাজদ্বীপ মাইতি। বামপন্থী সমর্থক শিক্ষার্থীদের হাতে বেদম মার খেয়ে শেষমেশ প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় রাজনৈতিক ও শিক্ষামহলে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, রাজদ্বীপ মাইতি বেছে বেছে বামপন্থী নেত্রীদের ছবিসহ অশ্লীল ইঙ্গিত এবং ধর্ষণের হুমকি দিতেন।
কী ঘটেছিল কলেজ স্ট্রিটে?
আজ, শনিবার (কিছু সূত্রানুসারে, এটি রবিবার ঘটেছে, তবে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী শনিবার ধরে লেখা হয়েছে), কলেজ স্ট্রিট এলাকায় রাজদ্বীপ মাইতিকে ঘিরে ধরেন কয়েকজন যুবক-যুবতী। অভিযোগ, এরা সকলেই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সমর্থক। রাজদ্বীপ মাইতিকে ঘিরে ধরে শুরু হয় মারধর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অধ্যাপক রীতিমতো ভয়ে কাঁপছেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন কয়েকজন যুবক। এমনকি, এক মহিলা এসে তাকে সপাটে চড়-থাপ্পড় মারছেন। মাঝে মধ্যে আরও কয়েকজন যুবকও তাকে মারধর করছেন। ঘটনার সময় কোনো তৃণমূল সমর্থক তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি বলেও অভিযোগ। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মারধরের মুখে অবশেষে তিনি ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছেন। মারধরের পর তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হবে বলেও জানানো হয়।
অভিযোগের মূলে কী?
রাজদ্বীপ মাইতি কলকাতার সিটি কলেজ অফ কমার্স অ্যান্ড বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের একজন গণিত বিষয়ের অধ্যাপক। তিনি শাসক দল তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা (পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি)-র সদস্য। তার বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য ও কাজের বহু অভিযোগ রয়েছে। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, শাসক দলের ছত্রছায়ায় থেকে তিনি সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি, দীপ্সিতা ধর, ঐশী ঘোষসহ বিভিন্ন বাম নেত্রী ও বামপন্থী মহিলা সমর্থকদের লাগাতার ধর্ষণের হুমকি দিতেন এবং তাদের ছবি বিকৃত করে অশ্লীল ইঙ্গিত করতেন।
তৃণমূলের নীরবতা ও রাজনৈতিক বিতর্ক
এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও অস্বস্তি তৈরি করেছে। প্রকাশ্যে তাদেরই একজন অধ্যাপক নেতাকে মারধর এবং নারী নিগ্রহের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কোনো তৃণমূল সমর্থকের তাকে রক্ষা করতে না আসা এবং দলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো বিবৃতি না আসা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কুণাল ঘোষের মতো নেতারা যখন পরিযায়ী শ্রমিক হেনস্থার ইস্যুতে ‘বাংলা বিরোধী বিজেপি’ স্লোগান তুলে বাঙালি অস্মিতার কথা বলছেন, তখন দলেরই একজন নেতার বিরুদ্ধে নারী নিগ্রহের এমন গুরুতর অভিযোগ এবং প্রকাশ্য লাঞ্ছনা নিঃসন্দেহে তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে।
এই ঘটনা আবারও শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এবং অনলাইনে নারী নিগ্রহের মতো গুরুতর সমস্যাগুলিকে সামনে আনল। পুলিশ এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়, এবং রাজদ্বীপ মাইতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সত্যতা কতটা, তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।