যক্ষ্মা চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন, বর্ধমান মেডিকেলে নতুন ‘ড্রাগ রেজিমেন’, কমছে ওষুধের মেয়াদ

দীর্ঘদিনের প্রচলিত যক্ষ্মা চিকিৎসার ধারাকে বদলে দিয়ে রোগীদের জন্য আশার আলো নিয়ে এলো বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। আরজি কর মেডিক্যালের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য উন্নত এবং সংক্ষিপ্ত পদ্ধতির ‘ড্রাগ রেজিমেন’ (Drug Regimen) শুরু হয়েছে। এর ফলে যক্ষ্মা রোগীরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন এবং ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও অনেকটাই কমে আসবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
নতুন পদ্ধতির সুবিধা: কমছে চিকিৎসার সময়কাল
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যক্ষ্মা রোগীদের জন্য নতুন এই ‘ড্রাগ রেজিমেন’ এমন একটি পদ্ধতি, যা যক্ষ্মা রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নেবে। বক্ষ বিভাগের প্রধান শান্তনু ঘোষ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “যক্ষ্মারোগীদের জন্য এটি সম্পূর্ণ নতুন একটি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স পদ্ধতি। এই নতুন রেজিমেন ব্যবহার করলে রোগীদের ওষুধ খাওয়ার সময়কাল অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রচলিত পদ্ধতিতে যেখানে রোগীকে টানা দু’বছর ওষুধ খেতে হতো, এই নতুন ‘ড্রাগ রেজিমেন’ ব্যবহার করলে সেই সময়কাল ছয় মাসে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি, অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নতুন এই পদ্ধতিতে অনেক কম হবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বহু রোগী ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী কোর্স সম্পূর্ণ করতে না পেরে মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন, যার ফলে রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করে। ওষুধের সময়কাল কমে এলে রোগীরা কোর্স সম্পূর্ণ করতে পারবেন, যা যক্ষ্মা নির্মূল করার কাজেও ব্যাপক সাহায্য করবে।
আনুষ্ঠানিক সূচনা ও রোগী পরিষেবা
শুক্রবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষ বিভাগে নতুন এই চিকিৎসা প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। এই শুভ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়রাম হেমব্রম, বর্ধমান মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিক ও চিকিৎসকরা। উদ্বোধনের দিনেই দু’জন যক্ষ্মা রোগীকে এই নতুন ‘ড্রাগ রেজিমেন’ দেওয়া হয়।
ক্রমবর্ধমান যক্ষ্মা রোগী ও সচেতনতার বার্তা
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, জেলায় যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত বছর জেলায় যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ছিল চার হাজারের বেশি, এবং চলতি বছরে সেই সংখ্যা আরও ৮০০-৯০০ বেড়েছে। যদিও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বছরভর যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হচ্ছে এবং মানুষকেও সচেতন থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই রোগের চিকিৎসার উপযুক্ত এবং উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে।
এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি যক্ষ্মা রোগীদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার জটিলতা কমিয়ে দ্রুত আরোগ্যের পথ প্রশস্ত করবে।