গোকর্ণার গুহায় রুশ মহিলার বিপজ্জনক ‘আধ্যাত্মিক আশ্রয়’ উদ্ধার পুলিশি তৎপরতায়, সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

কর্নাটকের গোকর্ণা এলাকার এক দুর্গম পাহাড়ি গুহার গভীর জঙ্গল থেকে এক রাশিয়ান মহিলা ও তাঁর দুই শিশুকন্যাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে আধ্যাত্মিক চর্চা ও নিঃসঙ্গতার খোঁজে গুহায় থাকার কথা বললেও, পুলিশি তদন্তে ওই মহিলার ভারতে অবৈধভাবে অবস্থানের চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে।
গুহায় বিপদজনক বসবাস
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৯ জুলাই কর্নাটকের গোকর্ণা থানার পুলিশ রামতীর্থ পাহাড় এলাকায় টহল দিচ্ছিল। পাহাড়ি অঞ্চলের একটি দুর্গম গুহার কাছ থেকে কিছু অস্বাভাবিক আওয়াজ শুনতে পেয়ে পুলিশ সতর্ক হয়ে এগিয়ে যায়। সেখানেই তারা ৪০ বছর বয়সী নিনা কুটিনা এবং তাঁর ৬ ও ৪ বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তানকে দেখতে পায়।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে নিনা জানান, তিনি গোয়া থেকে গোকর্ণায় এসেছেন আধ্যাত্মিক চর্চার উদ্দেশে। শান্ত পরিবেশে ধ্যান করার জন্যই তিনি এই গুহায় এসে থাকছিলেন। তবে, রামতীর্থ পাহাড় এলাকাটি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এক ভয়াবহ ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং সেখানে বিষধর সাপ ও বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি রয়েছে। শিশুদের নিয়ে এমন বিপজ্জনক জায়গায় থাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
উদ্ধার ও পরবর্তী পদক্ষেপ
পুলিশ ও বন দফতরের আধিকারিকরা প্রথমে ওই মহিলাকে পাহাড়ি গুহায় থাকার ঝুঁকি সম্পর্কে বোঝান। পরে তিন জনকেই নিরাপদে সেখান থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। নিনার অনুরোধেই পরবর্তীতে তাঁদের কুমটা তালুকের ব্যাংকিকোডলা গ্রামের এক ৮০ বছর বয়সী মহিলা সন্ন্যাসিনী যোগরত্না সরস্বতী পরিচালিত আশ্রমে নিয়ে যাওয়া হয়।
অবৈধ অনুপ্রবেশের তথ্য প্রকাশ
পুলিশ যখন নিনার পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পর্কিত নথি দেখতে চায়, তখন প্রথমে তিনি সহযোগিতা করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে গুহা থেকেই তার নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। নথি পরীক্ষা করে পুলিশ জানতে পারে যে, নিনা একবার বিজনেস ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, যার মেয়াদ ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ছিল। এরপর ২০১৮ সালে তিনি নেপাল হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করেন এবং তখন থেকেই তিনি কার্যত অবৈধভাবেই ভারতে বসবাস করছিলেন।
বর্তমানে নিনা ও তাঁর দুই সন্তানকে করওয়ারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন দফতরের পরিচালিত সুরক্ষা কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। উত্তর কন্নড় জেলার পুলিশ জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের (FRRO) সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য তাঁদের বেঙ্গালুরুতে এফআরআরও দফতরে নিয়ে যাওয়া হবে। আধ্যাত্মিক শান্তির খোঁজে আসা এক বিদেশি নাগরিকের এমন বিপজ্জনক ও অবৈধভাবে বসবাসের ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।