খোদ প্রধানমন্ত্রীকেই করা হলো সাসপেন্ড, থাইল্যান্ডেও শুরু হয়ে গেলো অস্থিরতা

দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, সাশ্রয়ী প্যাকেজ আর বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের জন্য যে থাইল্যান্ড ভারতীয় পর্যটকদের কাছে ‘দিঘা’ বা ‘পুরী’-র মতোই পরিচিত ছিল, সেই দেশ এখন উঠে এসেছে ভিন্ন এক রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে। দেশটির নবীন প্রধানমন্ত্রী পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রা-কে আদালতের নির্দেশে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এটি নিঃসন্দেহে বহু ভারতীয়র প্রিয় হানিমুন ডেস্টিনেশন থাইল্যান্ডের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

মাত্র ৩৮ বছর বয়সে গত ২০২৪ সালের অগাস্টে থাইল্যান্ডের সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন পেতংটার্ন শিনাওয়াত্রা। তার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত হলেও, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোন কল তাকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। এই ফোনালাপে পেতংটার্ন প্রতিবেশী কম্বোডিয়ার এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে নিজের দেশের সেনাবাহিনীর কঠোর সমালোচনা করেন। এই কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে এটিকে গুরুতর ভুল হিসেবে গণ্য করে থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত মঙ্গলবার তাকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেয়। এর পরপরই অন্তর্বর্তী (কেয়ারটেকার) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন ফুমথম ভেচায়াচাই।

বিতর্কের মূলে সেই ফাঁস হওয়া কথোপকথন:
জানা গেছে, থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংটার্ন কম্বোডিয়ার প্রভাবশালী নেতা হুন সেনকে ফোন করে বলেছিলেন, “আমাদের দেশের যে সেনা অফিসার তোমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, তার কথা তুমি গুরুত্ব দিও না। তুমি যা চাইছো, আমাকে বলো। আমি দেখে নেব কীভাবে সেটার ব্যবস্থা করা যায়।” নিজের দেশের সামরিক বাহিনীকে এড়িয়ে একজন বিদেশি নেতাকে সন্তুষ্ট করার এই চেষ্টা থাইল্যান্ডে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয় যখন হুন সেন নিজেই এই কথোপকথন রেকর্ড করে ফেসবুকে পোস্ট করেন এবং দাবি করেন যে তিনি ৮০ জনেরও বেশি মানুষের সঙ্গে এটি শেয়ার করেছেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আলাপচারিতা মুহূর্তেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন করে সীমান্ত উত্তেজনা:
থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়া দীর্ঘকাল ধরে প্রিয়া ভিহার মন্দিরের আশেপাশে একটি সীমান্ত বিবাদে জড়িয়ে আছে। মে মাসে এক থাই সেনার গুলিতে একজন কম্বোডিয়ান জওয়ানের মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। এই ঘটনার পর থাইল্যান্ড সীমান্তে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পাল্টা হিসেবে কম্বোডিয়াও থাই সিনেমা, টিভি শো, এমনকি ফল-মূল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। প্রধানমন্ত্রীর বিতর্কিত ফোন কল এবং চলমান সীমান্ত উত্তেজনা দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে জটিল করে তুলেছে।

ভারতীয় পর্যটকদের জন্য কী বার্তা?
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার আবহে ভারতীয় পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ২০২৪ সালে প্রায় ২১ লাখ ভারতীয় থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেছেন, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। তুলনামূলক কম খরচ এবং সহজ ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে থাইল্যান্ড এখনও বহু ভারতীয়র কাছে হানিমুন বা অবকাশ যাপনের অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডের পর্যটন এলাকায় বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা বা অশান্তির খবর নেই। তা সত্ত্বেও, যারা থাইল্যান্ডে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচিত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই অনুযায়ী সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এই রাজনৈতিক অস্থিরতা থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্পে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি তৈরি করেছে।