মনোজিত্‍ আর আইনজীবী নয়, লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেলো ধর্ষণে অভিযুক্ত ‘ক্রিমিনাল লয়ার’-এর

কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রের আইনজীবী জীবনের উপর নেমে এল চূড়ান্ত কোপ। এই জঘন্য ঘটনার মাত্র সাত দিনের মাথায় পশ্চিমবঙ্গ বার কাউন্সিল তার প্র্যাকটিস লাইসেন্স বাতিল করার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে মনোজিৎ মিশ্র আর কোনো আদালতে মক্কেলদের পক্ষে সওয়াল করতে পারবেন না, যা আইন পেশায় তার দীর্ঘদিনের অসদাচরণের চূড়ান্ত পরিণতি বলেই মনে করছেন অনেকে।

বুধবার বার কাউন্সিলের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেবল রাজ্যেই নয়, কেন্দ্রীয় বার কাউন্সিলকেও মনোজিতের নাম পাঠানো হয়েছে, যাতে আইনজীবীদের তালিকা থেকে তার নাম স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়া যায়। একইসঙ্গে, অন্য রাজ্যের বার কাউন্সিলগুলিকেও মনোজিতের লাইসেন্স বাতিলের কথা জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যাতে ভারতের কোথাও তিনি আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে না পারেন।

দক্ষিণ কলকাতার এক ল’ কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে মনোজিৎ মিশ্রের গ্রেফতারির পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। জানা গেছে, এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন ছিল, তবুও তিনি আলিপুর আদালতে অবাধে প্র্যাকটিস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনা সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে কীভাবে আইন পেশার মতো একটি সম্মানজনক ক্ষেত্রে এমন একজন ব্যক্তি দিনের পর দিন নিজের অপকর্ম চালিয়ে গেছেন।

মনোজিৎ মিশ্রের তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে যোগসূত্র ছিল। কসবা গণধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজ তাকে কলেজের অস্থায়ী পদ থেকে বহিষ্কার করেছে। একইসঙ্গে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাকি দুই ছাত্রকেও কলেজ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ কলেজের ভাবমূর্তি রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই নারকীয় অপরাধের তদন্তের ভার গ্রহণ করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্ত দল (SIT)। লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে এই তদন্তে। এখনো পর্যন্ত মনোজিৎ মিশ্র সহ মোট চারজনকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার গভীরে পৌঁছানোর জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

এই ঘটনা কেবল একজন আইনজীবীর লাইসেন্স বাতিল নয়, বরং বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং আইন পেশার পবিত্রতা বজায় রাখতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।