জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন নিয়মিত আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন সঞ্চিত অর্থই হয়ে ওঠে প্রবীণ নাগরিকদের একমাত্র ভরসা। কষ্টার্জিত এই টাকা শুধু সুরক্ষিত থাকলেই চলে না, তার উপর পর্যাপ্ত রিটার্ন পাওয়াটাও জরুরি, যাতে বার্ধক্য যেন কোনো রকম আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই কাটে। এই ভাবনা থেকেই প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ডাকঘরের একটি বিশেষ স্কিম ‘সুপারহিট’ প্রমাণিত হতে পারে। নাম তার ‘সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম’ (SCSS)।

এই স্কিমটি প্রবীণদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যেখানে আপনি কেবল ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিট (FD)-এর চেয়েও বেশি সুদ পাবেন না, বরং আপনার বিনিয়োগকৃত অর্থও থাকবে ১০০% সুরক্ষিত। সরকার সমর্থিত হওয়ায় এখানে টাকার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠে না। অবাক করা বিষয় হলো, এই স্কিমের মাধ্যমে একজন প্রবীণ নাগরিক মাত্র ৫ বছরে সুদের মাধ্যমেই প্রায় ১২.৩০ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন!

কী এই সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম (SCSS)?

SCSS হল ভারত সরকার দ্বারা সমর্থিত একটি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্প। এটি ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি একটি ডিপোজিট স্কিম যেখানে আপনি ৫ বছরের জন্য এককালীন অর্থ জমা করেন এবং সরকার প্রতি তিন মাস অন্তর আপনাকে এর উপর সুদের গ্যারান্টি দেয়।

এক নজরে SCSS:

• বর্তমান সুদের হার: বার্ষিক ৮.২% (যা বাজারের অন্যান্য অনেক বিকল্পের চেয়ে বেশি)।
• সর্বনিম্ন বিনিয়োগ: মাত্র ১,০০০ টাকা দিয়ে শুরু করা যায়।
• সর্বোচ্চ বিনিয়োগ: সর্বোচ্চ ৩০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যেতে পারে।

৫ বছরে কীভাবে পাবেন ১২.৩০ লক্ষ টাকা সুদ? অঙ্কটা দেখে নিন:

SCSS-এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এর উচ্চ সুদের রিটার্ন। হিসেবটা বেশ সহজ:

যদি একজন প্রবীণ নাগরিক সর্বোচ্চ ৩০,০০,০০০ টাকা এই স্কিমে বিনিয়োগ করেন, তাহলে –

• বার্ষিক সুদের হার: ৮.২%
• বার্ষিক সুদ: ৩০,০০,০০০ টাকার ৮.২% = ২,৪৬,০০০ টাকা
• ত্রৈমাসিক সুদ: ২,৪৬,০০০ / ৪ = ৬১,৫০০ টাকা (এই পরিমাণ প্রতি তিন মাস অন্তর আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে)
• ৫ বছরে মোট সুদ: ২,৪৬,০০০ টাকা x ৫ = ১২,৩০,০০০ টাকা

সুতরাং, ৫ বছর মেয়াদপূর্তিতে আপনি আপনার বিনিয়োগকৃত মূলধন (৩০ লক্ষ টাকা) এবং অর্জিত মোট সুদ (১২.৩০ লক্ষ টাকা) মিলিয়ে মোট ৪২,৩০,০০০ টাকা ফেরত পাবেন। এটি অবসরের পর নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের জন্য একটি বিশাল আর্থিক সুরক্ষা।

কারা বিনিয়োগ করতে পারবেন?

৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো ভারতীয় নাগরিক এই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়াও, যারা স্বেচ্ছাবসর (VRS) নিয়েছেন এমন বেসামরিক সরকারি কর্মচারী এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্য কিছু শর্ত সাপেক্ষে বয়সসীমায় ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কর সুবিধা ও অন্যান্য নিয়মাবলী:

• SCSS-এ বিনিয়োগ করলে আয়কর আইনের ধারা 80C এর অধীনে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় পাওয়া যায়।
• তবে, এই স্কিম থেকে অর্জিত সুদ করযোগ্য। যদি কোনো আর্থিক বছরে সুদের পরিমাণ ১,০০,০০০ টাকার বেশি হয়, তবে TDS (উৎসস্থলে কর কেটে নেওয়া) প্রযোজ্য হবে।
• মেয়াদপূর্তির পর এটি আরও ১ বছরের জন্য বাড়ানো যেতে পারে। এক্সটেন্ডেড অ্যাকাউন্টে মেয়াদপূর্তির তারিখে প্রযোজ্য সুদের হারেই সুদ পাওয়া যাবে।

কিছু জরুরি প্রশ্নের উত্তর:

1. SCSS-এর সুদ কি করমুক্ত? না, কেবল বিনিয়োগকৃত মূলধনের উপর 80C ধারার অধীনে কর ছাড় পাওয়া যায়। অর্জিত সুদ আপনার মোট আয়ের সাথে যোগ হয় এবং আপনার কর স্ল্যাব অনুযায়ী করযোগ্য।
2. স্বামী-স্ত্রী কি আলাদাভাবে ৩০ লক্ষ টাকা করে বিনিয়োগ করতে পারবেন? হ্যাঁ, যদি উভয়েরই বয়স ৬০ বছরের বেশি হয়, তাহলে তারা তাদের নিজ নিজ নামে ৩০ লক্ষ টাকা (মোট ৬০ লক্ষ টাকা) পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবেন।
3. স্কিমের সুদের হার কি ৫ বছরের জন্য স্থির থাকে? হ্যাঁ, অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে সুদের হার প্রযোজ্য থাকে, তা পুরো ৫ বছরের জন্য অপরিবর্তিত থাকে, এমনকি যদি সরকার পরবর্তীতে সুদের হার পরিবর্তন করে তাহলেও।
4. কেন এটি ব্যাঙ্ক FD-এর চেয়ে ভালো? সাধারণত SCSS-এর সুদের হার ব্যাঙ্ক FD, বিশেষ করে সিনিয়র সিটিজেন FD-এর চেয়ে বেশি হয়। এছাড়াও, এটি সরকার দ্বারা সমর্থিত হওয়ায় আপনার অর্থ ডুবে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই, যা একটি ব্যাঙ্ক FD-এর ক্ষেত্রে সবসময় বলা যায় না।
5. ৫ বছরের আগে টাকার প্রয়োজন হলে কী হবে? যদি অ্যাকাউন্টটি এক বছরের আগে বন্ধ করা হয়, তবে কোনো সুদ দেওয়া হবে না। যদি কোনো সুদ দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তা মূলধন থেকে আদায় করা হবে। ১ বছর থেকে ২ বছরের মধ্যে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলে জমার পরিমাণের ১.৫% জরিমানা এবং ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে বন্ধ করলে ১% জরিমানা ধার্য করা হবে।

সব মিলিয়ে, সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি নিরাপদ, উচ্চ-রিটার্ন এবং নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ বিকল্প, যা তাদের অবসর জীবনকে সত্যিই আর্থিক দিক থেকে ‘সুপারহিট’ করতে পারে।