“করোনা টিকার জেরেই কি কম বয়সে হঠাত্ হার্ট অ্যাটাক?”-স্পষ্ট করে যা জানালো AIIMS-ICMR

কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের ফলে তরুণদের আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যু বা অন্য কোনো বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা বাড়ে না। এমনই স্বস্তিদায়ক তথ্য উঠে এসেছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (AIIMS) এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (ICMR)-এর এক সাম্প্রতিক যৌথ গবেষণায়। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও এই গবেষণার ফলাফলকে সমর্থন করে সবুজ সংকেত দিয়েছে।
২০২৩ সালের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশের ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৭টি হাসপাতালে এই বিশাল আকারের গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষক দল ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময়কালের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই সময়ে যেসব তরুণ সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর কারণ ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হয়েছে।
গবেষণার মূল ফলাফল:
গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত স্পষ্ট: কোভিড টিকা গ্রহণের ফলে তরুণদের হৃদরোগ বা আকস্মিক মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় না। বরং, তাদের মৃত্যুর পেছনে জীবনযাপন পদ্ধতি, আগে থেকে বিদ্যমান শারীরিক সমস্যা (pre-existing conditions) অথবা অনিয়মিত অভ্যাসই (unhealthy habits) প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ, যারা হঠাৎ মারা গেছেন, তাদের ক্ষেত্রে টিকা কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা রাখেনি।
রাজনৈতিক মন্তব্যের পরদিনই গবেষণা প্রকাশ:
এই গবেষণার ফলাফল সামনে এল কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার এক বিতর্কিত মন্তব্যের ঠিক পরদিন। সম্প্রতি তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, ভ্যাকসিনের অনুমোদন ও বিতরণে তাড়াহুড়ো করায় রাজ্যে তরুণদের মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, এই সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের কথা ভাবছেন। তবে AIIMS এবং ICMR-এর এই গবেষণা মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার আশঙ্কার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই বলেই প্রমাণ করছে।
গুজব মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক ভিত্তি:
কেন্দ্রীয় সরকার দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার উদ্বেগের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। বরং, এই গবেষণার তথ্য এটাই প্রমাণ করে যে, কোভিড টিকা সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষ করে তরুণদের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ।
বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে, AIIMS এবং ICMR-এর এই বিস্তারিত গবেষণা কোভিড টিকার নিরাপত্তা নিয়ে সমাজে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভুল ধারণা, গুজব এবং অহেতুক আতঙ্কের অবসান ঘটাতে সাহায্য করবে। চিকিৎসকরা বারবার বলছেন, টিকার নিরাপত্তা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এই গবেষণা কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকার ভূমিকার উপর পুনরায় আস্থা স্থাপন করল।