রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর স্নাতক স্তরের ভর্তি প্রক্রিয়ার সময়সীমা ১৫ দিন বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য এক বিশাল স্বস্তি নিয়ে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার ফলে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সুযোগ পাবেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আজ, মঙ্গলবার, ২ জুলাই, ভর্তির আবেদনের শেষ তারিখ ছিল, যা এখন ১৫ জুলাই পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি এবং সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, উচ্চশিক্ষা বিভাগের সেন্ট্রালাইজড অনলাইন পোর্টালে ইতিমধ্যে তিন লক্ষ পঁচিশ হাজার তিনশো বিয়াল্লিশ জন শিক্ষার্থী নাম নথিভুক্ত করেছেন এবং মোট আঠারো লক্ষ চব্বিশ হাজার নয়শো চৌদ্দটি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ২৯০১ জন শিক্ষার্থী ভিনরাজ্যের বাসিন্দা।

ব্রাত্য বসু আরও বলেন, অনলাইন পোর্টালের ‘চ্যাটবট বীণা’ এখন পর্যন্ত তেত্রিশ হাজার দুশো সাতষট্টিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকর সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই অনলাইন পোর্টাল শিক্ষার্থীদের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ করেছে এবং দ্রুত তাদের প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করছে।

এদিকে, উচ্চশিক্ষা দফতর একই দিনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টাল’ এবং এসএসসির ‘উৎসবশ্রী পোর্টাল’ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এই দুটি পোর্টাল ৭ জুলাই, সোমবার, সকাল ১১টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। জানা গেছে, ওবিসি (অতিদরিদ্র) সংক্রান্ত আইনি জটিলতার কারণে ক্যাটাগরির হেরফের করার জন্য এই পোর্টাল দুটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এই সাময়িক বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যা হতে পারে, তবে শিক্ষামন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন যে, এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে এবং পোর্টালগুলি ৭ জুলাই সকালে পুনরায় চালু হবে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা এই পোর্টালগুলো ব্যবহার করে আরও সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এছাড়াও, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় ধরনের পোর্টাল ব্যবস্থাপনাগত পরিবর্তনের ঘোষণা করা হয়েছে। এতদিন ‘বাংলার শিক্ষা পোর্টাল’, ‘উৎসবশ্রী’, ‘আইওএসএমএস’ এবং ‘স্কলারশিপ’ – এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ পোর্টাল কেন্দ্রীয় ন্যাশনাল ইনফরমেটিক সেন্টারের (NIC) অধীনে পরিচালিত হত। তবে এবার এই চারটি পোর্টালকে রাজ্য সরকারের অধীনে নিয়ে আসা হবে এবং এগুলোর ব্যবস্থাপনা করবে “ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ডেটা সেন্টার”। এই পরিবর্তনের ফলে পোর্টালগুলির কার্যক্রম আরও দ্রুত এবং কার্যকরী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সুবিধাজনক হতে চলেছে। ভর্তির সময়সীমা বাড়ানোর ফলে যে সকল শিক্ষার্থী এখনও আবেদন করতে পারেননি, তারা এখন অতিরিক্ত সময় পাবেন এবং নিজেদের পছন্দের কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি, পোর্টালগুলির কার্যক্রম উন্নত হওয়ায় আবেদন প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং দ্রুত হবে।

রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক উভয়েই বেশ আনন্দিত। একদিকে, ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে, অন্যদিকে পোর্টালগুলির উন্নয়ন এবং রাজ্য সরকারের অধীনে পরিচালনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সহজতর ও দ্রুত সেবা নিশ্চিত হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জোর দিয়ে বলেছেন যে, রাজ্য সরকার সবসময় শিক্ষার্থীদের পাশে রয়েছে এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো পদক্ষেপ নেবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই সময়সীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত না হয়। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা ভাবছি এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।” এই ঘোষণা রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।