২০২৪ সালের ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরে সংশোধন করতে হবে, তৃণমূলের জোরালো দাবি

আসন্ন নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন এবং নির্বাচনী প্রচারের স্বচ্ছতা নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের কাছে জোরালো দাবি জানাল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০০৩ সালের পুরনো ভোটার তালিকার পরিবর্তে ২০২৪ সালের সর্বশেষ ভোটার তালিকাকে ভিত্তি ধরে কাজ করার এবং ভুয়ো ভোটারদের বাদ দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। একইসঙ্গে, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সরকারি কর্মসূচির আড়ালে নির্বাচনী প্রচার বন্ধ করারও আর্জি জানিয়েছে তৃণমূল।
ভোটার তালিকা ও ভুয়ো ভোটারের অভিযোগ
তৃণমূলের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে স্পষ্ট জানিয়েছে, নির্বাচনের পবিত্রতা বজায় রাখতে ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা অপরিহার্য। তাদের দাবি, অনেক সময় পুরনো তালিকা ব্যবহার করে বা ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কারচুপি করার চেষ্টা হয়। তাই, ২০২৪ সালের হালনাগাদ করা ভোটার তালিকাকেই ভিত্তি হিসেবে ধরে তার ভিত্তিতে সংশোধনের কাজ করতে হবে এবং তালিকা থেকে সমস্ত ভুয়ো ভোটারদের বাদ দিতে হবে। এই পদক্ষেপ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াবে বলে তৃণমূল মনে করে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সরকারি কর্মসূচি নিয়ে আপত্তি
নির্বাচনী প্রচারের সমতার নীতিকে সামনে রেখে তৃণমূল কমিশনকে জানিয়েছে, ভোট ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সরকারি কর্মসূচী যেন নির্বাচনী প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত না হয়। অনেক সময় দেখা যায়, সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন বা প্রশাসনিক বৈঠকের নাম করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আসলে নিজেদের দলের প্রচার চালাচ্ছেন, যা নির্বাচনী বিধির পরিপন্থী। তৃণমূলের আর্জি, নির্বাচনী প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সরকারি কর্মসূচি বন্ধ করা হোক অথবা সেগুলির উপর কঠোর নজরদারি চালানো হোক যাতে তারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্বাচনী সুবিধা না নিতে পারেন।
রাজ্যপালের কার্যকলাপ নিয়ে প্রশ্ন
এছাড়াও, তৃণমূল কংগ্রেস ভোটের তারিখ ঘোষণার পর রাজ্যপালের কার্যকলাপের বিরুদ্ধেও আপত্তি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় রাজ্যপালের কিছু পদক্ষেপ পক্ষপাতদুষ্ট মনে হচ্ছে এবং তা নির্বাচনের নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করতে পারে। এই বিষয়ে কমিশনকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে তৃণমূল।
বিজেপির তীব্র কটাক্ষ
তৃণমূলের এই দাবিগুলির প্রতিক্রিয়ায় তীব্র কটাক্ষ করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এই দাবিগুলিকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘তৃণমূলের হতাশার বহিঃপ্রকাশ’ বলে বর্ণনা করেছে। বিজেপির বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেস পরাজয়ের ভয়ে এখন থেকেই অজুহাত তৈরি করছে এবং সাংবিধানিক পদাধিকারী ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ আনছে। তারা আরও বলেছে, যদি কোনো অনিয়ম থাকে, তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব কমিশনের এবং বিজেপি সবসময় নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে।
নির্বাচন কমিশনের এই দাবিগুলির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার। আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এই টানাপোড়েন নিঃসন্দেহে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে।