‘অপারেশন সিঁদুর’-এ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ছিল! বড় দাবি করলেন নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে ভারতের সামরিক সাফল্যের উৎসবের আবহে নতুন বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতের প্রতিরক্ষা সহদূত, নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন শিব কুমারের একটি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে, যা ভারতের যুদ্ধবিমান হারানো এবং অপারেশনের প্রাথমিক পর্যায়ে কথিত ‘রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’-এর অভিযোগ তুলেছে। এই অভিযোগের জেরে বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে।

জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ক্যাপ্টেন শিব কুমার দাবি করেন যে, ‘অপারেশন সিঁদুরে’ ভারত কিছু সংখ্যক যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। তার মতে, এর মূল কারণ ছিল পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে প্রত্যাঘাতের যে সিদ্ধান্ত সেনা নিয়েছিল, অপারেশনের গোড়ার দিকে তার ওপর ‘রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’ বিদ্যমান ছিল। ক্যাপ্টেন কুমারের এই বক্তব্য সামনে আসার পরেই দেশের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় তুমুল আলোচনা।

ক্যাপ্টেন কুমারের এই দাবির পরপরই ময়দানে নামে বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেস। দলের সাংসদ জয়রাম রমেশ এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন, “প্রথমে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ সিঙ্গাপুরে কিছু সত্যি ঘটনা প্রকাশ করেন। এবার আরেকজন উচ্চপদস্থ প্রতিরক্ষা আধিকারিক ইন্দোনেশিয়ায় বক্তব্য রাখলেন। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে প্রকৃত সত্য তুলে ধরছেন না?”

তবে এই অভিযোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস। দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ক্যাপ্টেন শিব কুমারের বক্তব্যকে ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে। দূতাবাস দাবি করেছে যে, তিনি বোঝাতে চেয়েছেন ভারতীয় বাহিনী একটি অসামরিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে কাজ করে, যা ভারতের প্রতিবেশী কিছু দেশে হয় না। কিছু সংবাদমাধ্যম তার বক্তব্যের উদ্দেশ্যকে বিকৃত করেছে বলেও দূতাবাস উল্লেখ করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর পূর্বের দাবি ও ক্যাপ্টেন কুমারের পাল্টা যুক্তি:

উল্লেখ্য, ‘অপারেশন সিঁদুরের’ আগে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং বারবার দাবি করেছিলেন যে, পাকিস্তানের ওপর প্রত্যাঘাতের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে সেনার ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, জাকার্তার ওই সেমিনারে ইন্দোনেশিয়ার একজন অ্যারোস্পেস বিশেষজ্ঞ দাবি করেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে ভারত তিনটি রাফাল, একটি মিগ-২৯ এবং একটি সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। পাশাপাশি একটি ট্যাকটিক্যাল ড্রোন এবং দুটি এস-৪০০ লঞ্চারেরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এই দাবি অবশ্য ক্যাপ্টেন শিব কুমার সরাসরি খারিজ করে দেননি। বরং তিনি বলেছেন, “আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। মেনে নিচ্ছি, আমরা এয়ারক্রাফ্ট হারিয়েছি। পাকিস্তানের সেনাঘাঁটি এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমে আঘাত হানার যে সিদ্ধান্ত হয়, তার উপরে রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের জন্যই এটা হয়েছিল।”

‘রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’ কী ছিল?

ক্যাপ্টেন শিব কুমার নিজেই সেই ‘রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ’-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বলা হয়েছিল কোনো মিলিটারি বা সিভিল ইনস্টলেশনে আঘাত হানা যাবে না। জঙ্গিদের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন কোথাও আঘাত হানা যাবে না। এই নিয়ন্ত্রণ মেনে চলতে গিয়েই ভারতের কিছু ক্ষতি হয়েছিল। যদিও এরপরেই আমরা ট্যাকটিক্স বদলে ফেলি। ওদের মিলিটারি ইনস্টলেশন লক্ষ্য করে প্রত্যাঘাত করি। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস করে দিই। এ কারণেই আমাদের মিসাইলগুলি পাকিস্তানে ঢুকে অনায়াসে লক্ষ্যভেদ করেছিল।”

এই ঘটনা ভারতীয় সামরিক নীতি নির্ধারণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগকে নতুন করে সামনে এনেছে। যদিও ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল অনিল চৌহান আগেই যুদ্ধবিমান হারানোর সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ক্যাপ্টেন শিব কুমারের এই সরাসরি অভিযোগ এবং তার ব্যাখ্যা জনমনে গভীর কৌতূহল ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দেশের জনগণ এখন এই বিতর্কের আসল সত্য জানতে আগ্রহী।