ওয়াজিরিস্তানে ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলা, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘অর্থহীন’ অভিযোগ, দিল্লি’র তীব্র প্রত্যাখ্যান; উত্তপ্ত সীমান্ত পরিস্থিতি

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে সংঘটিত এক ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলার পর ইসলামাবাদ সরাসরি ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, এই আত্মঘাতী হামলার পেছনে ভারতের মদত রয়েছে। যদিও ভারতের বিদেশমন্ত্রক পাকিস্তানের এই অভিযোগকে তীব্র অবজ্ঞা সহকারে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওয়াজিরিস্তানে আত্মঘাতী হামলা: ১৩ পাক সেনার প্রাণহানি

গত শনিবার (২৮শে জুন, ২০২৫) ওয়াজিরিস্তানের মীল আলি এলাকায় সেনাবাহিনীর কনভয়ে এক ভয়াবহ আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আফগানিস্তান সীমান্তের কাছে এই হামলায় পাকিস্তানের ১৩ জন সেনাকর্মী প্রাণ হারান। এছাড়াও সেনাকর্মী-সহ বেশ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আহত হন। সাম্প্রতিককালে ওয়াজিরিস্তানে এত বড় আকারের হামলা হয়নি, যা ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

এই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছে আফগানিস্তানের ‘ফিতনা-আল-খাওয়ারিজি’ (Fitna-al-Khawarji) সংগঠন। এই সংগঠনটি আবার আফগানিস্তানের ‘হাফিজ গুল বাহাদুর’-এর আত্মঘাতী হামলা শাখা, যা ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ (Tehrik-i-Taliban Pakistan)-এর সঙ্গে সংযুক্ত।

ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও দিল্লির কঠোর জবাব

এই হামলার আবহেই পাকিস্তান সেনার তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়। ওই হামলাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘বর্বরোচিত’ বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে জানানো হয় যে, হামলায় নিরীহ নাগরিক, একজন মহিলা ও দুই শিশুও প্রাণ হারিয়েছেন। আর এই প্রেক্ষাপটেই পাক সেনা হামলায় ভারতযোগ রয়েছে বলে দাবি করে এবং হামলাকারী জঙ্গিদের ভারত মদত জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়।

ওয়াজিরিস্তানে হামলার তীব্র নিন্দা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফও। তিনি এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে উল্লেখ করেন। তবে, ভারতের বিরুদ্ধে পাক সেনা যে অভিযোগ তোলে, তার সপক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ইসলামাবাদ।

এরপরই ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক কড়া বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সেনার বিবৃতি দেখেছি, যাতে ওয়াজিরিস্তান হামলার জন্য ভারতকে দোষারোপ করা হয়েছে। ওই বিবৃতিকে ততটাই অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান করছি আমরা, যতটা অবজ্ঞা সেটির প্রাপ্য।” অর্থাৎ, ভারত পাকিস্তানের এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অবজ্ঞাপূর্ণ বলে মনে করছে।

পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাস: বিশ্ব সূচকে দ্বিতীয় স্থানে

সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানে নতুন করে নাশকতার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েকদিন আগেই দুটি পৃথক ঘটনায় দুই সেনাকর্মীর মৃত্যু হয় এবং সংঘর্ষে ১১ জন জঙ্গিরও মৃত্যু ঘটে। ‘বিশ্ব সন্ত্রাস সূচক’-এ এই মুহূর্তে পাকিস্তান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যা তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ভঙ্গুরতা তুলে ধরছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং এই সময়ে নাশকতায় ১০৮১ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিওরিটি স্টাডিজের হিসেব অনুযায়ী, গত মে মাসে ৮৫টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা ছিল ৮১টি।

ওয়াজিরিস্তানের এই হামলা এবং তার প্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে তৈরি হওয়া বাগযুদ্ধ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে, ভারতের স্পষ্ট অবস্থান এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগকে আমলে নিতে নারাজ।