“কয়েক মাসে আগে হয় বিয়ে”-নতুন বউকে পতিতালয়ে বিক্রি যুবকের, চাঞ্চল্য ঘটনায়

এক ভয়াবহ প্রতারণার শিকার হয়ে পাঞ্জাবের এক পতিতালয় থেকে পালিয়ে ফিরে এলেন রায়গঞ্জের এক গৃহবধূ। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে দ্বিতীয়বার ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি, কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তে ভেঙে যায় এক চরম দুঃস্বপ্নে। অভিযোগ, নতুন ‘স্বামী’ তাকে এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করে পালিয়ে গেছে, এমনকি তার গয়নাও লুটে নিয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

রায়গঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলা, প্রথম বিয়ে হয়েছিল রায়গঞ্জেরই অন্য একটি গ্রামে। দুই সন্তানের জননী হওয়ার পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি ছোট সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পর পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে ফেসবুকে তাঁর পরিচয় হয়। এই বন্ধুত্ব দ্রুত প্রেমের সম্পর্কে গড়ায় এবং ওই তরুণ তাকে বিয়েও করেন। নতুন করে জীবন শুরুর আশায় এই যুগল পাড়ি জমান সুদূর পাঞ্জাবে।

মহিলার দাবি, তার নতুন স্বামী পাঞ্জাবে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করে এবং সেখানেই একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে নিয়ে যায়। পাঞ্জাবের বাকপুরে একটি ভাড়াঘরে মাসখানেক থাকার পর, অভিযোগ, ওই তরুণ তাকে অন্য একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে পালিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, পালানোর আগে মহিলাটির সোনার গয়নাও হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ।

মহিলা জানান, তিনি যখন বুঝতে পারেন যে ওই বাড়িটি আসলে একটি পতিতালয়, তখন সেখান থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাড়ির মালিক তাকে আটকে দেন এবং জানান যে, সেখান থেকে মুক্তি পেতে হলে তাকে এক লক্ষ টাকা দিতে হবে, কারণ ওই পরিমাণ অর্থ দিয়েই তাকে ‘কেনা’ হয়েছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, নিজের জীবন বিপন্ন জেনেও মহিলা সাহসিকতার পরিচয় দেন। সকলের অলক্ষ্যে শৌচাগারের জানালা গলে তিনি ওই পতিতালয় থেকে পালিয়ে সোজা জলন্ধর স্টেশনে পৌঁছান। সেখান থেকে ট্রেনে চেপে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি নিজের বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন এবং পরিবারের সদস্যদের কাছে গোটা ঘটনা খুলে বলেন।

শনিবার, নির্যাতিতা মহিলা সোনাই দাস নামক ওই প্রেমিক যুবক এবং তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ থানার অন্তর্গত কর্ণজোড়া পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

এই ঘটনা শুধু একজন নারীর প্রতারিত হওয়ার কাহিনি নয়, এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং প্রবাসে নারীদের নিরাপত্তাহীনতার এক ভয়ঙ্কর দিক তুলে ধরছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে স্থানীয় মহল।