বিশেষ: পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অলৌকিক কাহিনি, যা শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় সকলের

‘রথযাত্রা লোকারণ্য, মহা ধুমধাম’ – এই পংক্তিটি পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে সমার্থক। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথযাত্রা শুরু হবে, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা লাখো ভক্তের সমাগম ঘটবে। পুরীর জগন্নাথ মন্দির কেবল একটি প্রাচীন উপাসনালয় নয়, এটি অসংখ্য রহস্যের আধার, যা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এই রথযাত্রার পুণ্যলগ্নে জেনে নেওয়া যাক পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেই সব অলৌকিক কাহিনি, যা আজও বিস্ময় উদ্রেক করে।
১. ছায়াহীন মন্দির:
পুরীর সুবিশাল জগন্নাথ মন্দিরের স্থাপত্য এক বিস্ময়। দিনের যেকোনো সময়, সূর্য যে অবস্থানেই থাকুক না কেন, মন্দিরের মূল কাঠামোর কোনো ছায়া মাটিতে পড়ে না। এর কারণ আজও অজানা। এই স্থাপত্যশৈলী কীভাবে প্রাচীনকালে নির্মিত হয়েছিল, তা এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন।
২. নব কলেবর ও গোপনীয়তা:
জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার দারুমূর্তি (কাঠের মূর্তি) প্রতি ৮, ১২ বা ১৯ বছর অন্তর বদলানো হয়, যাকে ‘নব কলেবর’ রীতি বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট শুভ লক্ষণযুক্ত নিম গাছ চিহ্নিত করে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে ২১ দিনের মধ্যে নতুন মূর্তি নির্মাণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ কঠোরভাবে গোপন রাখা হয়, যা এর রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।
৩. বাতাসের বিপরীতে উড়ে নিশান:
জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় যে ধ্বজা বা নিশান ওড়ে, তা সব সময় বাতাসের উল্টো দিকে উড়তে দেখা যায়। এই প্রাকৃতিক নিয়ম বিরুদ্ধ ঘটনা আজও ব্যাখ্যা করা যায়নি। মন্দিরের সেবায়েতরা প্রতিদিন নিয়ম করে এই ধ্বজা পরিবর্তন করেন। প্রচলিত বিশ্বাস, একদিনের জন্যও এই প্রথা বন্ধ থাকলে ১৮ বছরের জন্য মন্দির বন্ধ রাখতে হবে।
৪. মহাপ্রসাদের অলৌকিক রন্ধনপ্রক্রিয়া:
জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ রান্নার পদ্ধতিও কম বিস্ময়কর নয়। সাতটি মাটির পাত্র একটির উপর আরেকটি চাপিয়ে রান্না করা হয়। আশ্চর্য বিষয় হলো, সবচেয়ে উপরের পাত্রের খাবার সবার আগে রান্না হয় এবং নিচের পাত্রের খাবার সবার শেষে সিদ্ধ হয়। এই প্রক্রিয়া কীভাবে ঘটে, তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
৫. মন্দিরের অভ্যন্তরে সমুদ্রের গর্জন নীরব:
পুরীর জগন্নাথ মন্দির সমুদ্রের খুব কাছে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও, মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারে প্রবেশ করার পরই সমুদ্রের তীব্র গর্জন শোনা যায় না। মন্দির থেকে বেরিয়ে এলেই আবার সেই গর্জন শোনা যায়। কথিত আছে, সমুদ্রের গর্জনে দেবী সুভদ্রার বিশ্রাম ব্যাহত হওয়ায়, তাঁর অনুরোধে জগন্নাথদেব মন্দিরের অভ্যন্তরে সমুদ্রের গর্জন প্রবেশ না করার নির্দেশ দেন।
৬. মন্দিরের উপর দিয়ে পাখির উড়ান নিষিদ্ধ:
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের উপর দিয়ে কোনো পাখি উড়তে দেখা যায় না, এমনকি বিমানও উড়ে না। এর কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। এই অলৌকিক ঘটনা ভক্তদের মধ্যে এক গভীর বিশ্বাস তৈরি করেছে।
৭. বিপরীতমুখী সমুদ্রের হাওয়া:
সাধারণত দিনের বেলায় সমুদ্র থেকে ভূখণ্ডের দিকে এবং রাতে ভূখণ্ড থেকে সমুদ্রের দিকে বাতাস প্রবাহিত হয়। কিন্তু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কাছে দিনে ও রাতে সমুদ্রের হাওয়া উল্টো দিকে বয়, যা প্রকৃতির সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম।
এই সব রহস্যময় ঘটনা জগন্নাথ মন্দিরকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। বিজ্ঞান যেখানে নীরব, ভক্তি ও বিশ্বাসই সেখানে শেষ কথা বলে। রথযাত্রার এই শুভ দিনে এই অলৌকিক কাহিনিগুলো ভক্তদের মনে এক গভীর ভক্তির সঞ্চার করে।