“তেহরান নিরাপদ নয়, নিজস্ব ব্যবস্থায় সরে যান”, ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি! ভারতীয়দের সরতে বলল দূতাবাস

মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে মহাযুদ্ধের মেঘ আরও ঘনীভূত। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা পাঁচ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাত এখন সরাসরি তেহরানের বুকে আছড়ে পড়ছে। লাগাতার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানের রাজধানী এখন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, তেহরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস এক জরুরি পরামর্শবার্তায় সেখানকার ভারতীয় নাগরিক ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অবিলম্বে শহর ছাড়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
ভারতীয় দূতাবাস: ‘নিজস্ব ব্যবস্থায় সরে যান, এখনই যোগাযোগ করুন!’
মঙ্গলবার জারি করা দূতাবাসের বিবৃতিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, “যাঁরা নিজস্ব ব্যবস্থায় তেহরান ছেড়ে নিরাপদ এলাকায় যেতে পারেন, অনতিবিলম্বে তাঁদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।” এটি কেবল একটি পরামর্শ নয়, একরকমের চরম সতর্কতা। একই সাথে, যেসব ভারতীয় নাগরিক এখনও দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, তাঁদের দ্রুত নিজেদের বর্তমান অবস্থান ও ফোন নম্বর শেয়ার করতে বলা হয়েছে। এই যোগাযোগের মাধ্যমেই দূতাবাস জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তার হাত বাড়াতে পারবে।
জরুরি হেল্পলাইন নম্বরগুলো হল:
+98 9010144557
+98 9128109115
+98 9128109109
এক্স (আগের টুইটার)-এও একটি সতর্কবার্তা পোস্ট করে দূতাবাস জানিয়েছে, “বর্তমান পরিস্থিতিতে সব ভারতীয় নাগরিক ও PIO-দের অনুরোধ, অপ্রয়োজনীয় চলাফেরা এড়িয়ে চলুন, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মানুন এবং দূতাবাসের সোশ্যাল মিডিয়া ফলো করুন।”
তেহরানে মৃত্যুর মিছিল: নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের অগ্নিগর্ভ বার্তা
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ইরানে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২২৪ জন ইরানীয় নিহত এবং ১২০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৪ জন এবং আহত ৫৯২ জন। সোমবার রাতের হামলায় ইসরায়েল ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলের ভবন সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে। জবাবে ইরানও ব্যারেজের পর ব্যারেজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। তেহরানের আকাশ এখন মিসাইলের আলোয় আলোকিত, আর বাতাসে বারুদের গন্ধ।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরাসরি ঘোষণা করেছেন, “মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে দেব!” তিনি বলেছেন, “আমরা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন এবং তাদের সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক সব ধ্বংস করব। যা করা দরকার, করব।” এমনকি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনিকেও সরাসরি টার্গেট করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও G7 সম্মেলন থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসে তেহরানবাসীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছেন: “তেহরান এখন নিরাপদ নয়। অবিলম্বে শহর ছেড়ে দিন।” হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই মুহূর্তে ওয়াশিংটন ও তেল আবিব ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় রেখে চলেছে।
শিক্ষা, ব্যবসা বা কাজের সূত্রে তেহরানে বসবাসকারী বহু ভারতীয় এই মুহূর্তে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তাঁদের পরিজনরা ভারতে প্রহর গুণছেন। বিশেষজ্ঞরা ভারতীয় দূতাবাসের পরামর্শকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন এবং অমান্য না করার অনুরোধ জানাচ্ছেন। তেহরানের বুকে এই যুদ্ধের আগুন আর কতদূর ছড়ায়, সেটাই এখন আন্তর্জাতিক মহলের সব থেকে বড় প্রশ্ন।