অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে বুলডোজার নামাল প্রশাসন, এতবড় পদক্ষেপ কোথায় নিল জানেন?!

দীর্ঘদিনের জবরদখলের জঞ্জাল সাফ করতে এবার কড়া হাতে আসরে নামল ব্লক প্রশাসন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে আদি গঙ্গার পাড়ে সেচ দফতরের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা নির্মাণ ও দোকানপাট ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কর্ণপাত না করায়, এবার সরাসরি বুলডোজার নামিয়ে ‘যোগী মডেলের’ আদলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

নিকাশী বন্ধ, পরিবেশ বিপর্যস্ত – শেষমেশ কড়া পদক্ষেপ
আদি গঙ্গার পাড় বরাবর অবৈধ নির্মাণগুলির কারণে শুধু যে সরকারি জমি দখল হচ্ছিল তা নয়, বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল গুরুত্বপূর্ণ নিকাশী নালাগুলি। এর ফলে বর্ষায় জল জমার সমস্যা সহ পরিবেশগত নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মৌখিক এবং মাইকিং করে বারবার সতর্ক করা হলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এবার মগরাহাট ড্রেনেজ ডিভিশন এবং বারুইপুর ব্লক প্রশাসনের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী কর্মীরা সম্মিলিতভাবে এই অভিযানে নেমেছেন।

সোমবার থেকে বারুইপুরের পদ্মপুকুর এলাকা থেকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে একের পর এক অবৈধ দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পদ্মপুকুর বাইপাসে কামালগাজী যাওয়ার মুখে দীর্ঘদিন ধরে ঘুগনি, মুদি, চা, মুরগির মাংস এবং বাইক সারাইয়ের মতো অসংখ্য অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছিল। বারুইপুর থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে এই উচ্ছেদ অভিযানকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।

১৭ কিলোমিটার জুড়ে অভিযান, তারপর লোহার ফেন্সিং
জানা গেছে, পদ্মপুকুরের পর বংশী বটতলা এলাকা থেকে দক্ষিণ শাসন পর্যন্ত মোট ১৭ কিলোমিটার আদি গঙ্গার পাড় জবরদখলমুক্ত করতে এই অভিযান চালানো হবে। এই বিপুল পরিমাণ এলাকা খালি করার পর ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোহার ফেন্সিং দিয়ে সুরক্ষিত করা হবে, যার জন্য ১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ: ‘আমাদের পথে বসতে হল!’
প্রশাসনের এই আকস্মিক পদক্ষেপে বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন। দীপঙ্কর মণ্ডল নামের এক ব্যবসায়ী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “বেশ কয়েকবার আগেও ব্লক প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিল, মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু আজ হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল। বিধায়কের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি জানালেন সমস্ত দোকান ভাঙ্গা হবে। আমাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করে দিক রাজ্য সরকার।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমার এই ছোট্ট দোকানের ওপরই আমার পরিবার নির্ভরশীল। আজ দোকানটা চলে যাওয়ায় কি হবে বুঝতে পারছি না। আগামী দিনে আমার সংসার কীভাবে চলবে, আমাদের পথে বসতে হল। সরকার আমাদের প্রতি একটু সহানুভূতি দেখালে আমাদের পরিবারগুলো বাঁচবে, না হলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।”

প্রশাসন যেখানে দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে বদ্ধপরিকর, সেখানে উচ্ছেদের শিকার হওয়া পরিবারগুলির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। এই উচ্ছেদ অভিযান কি বারুইপুরের আদি গঙ্গাকে তার পুরোনো রূপ ফিরিয়ে দেবে, নাকি কেবলই কিছু পরিবারের রুটি-রুজি কেড়ে নেবে, তা ভবিষ্যতই বলবে।