ফি না দেওয়ায় ক্লাস ওয়ানের ছাত্রকে ঘরবন্দি করে রাখল স্কুল, টাকা মেটানোর পর উদ্ধার হল শিশুর মরদেহ

একজন পড়ুয়ার কাছে স্কুল তার দ্বিতীয় বাড়ির মতো। সেখানেই সে তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো লাভ করে। কিন্তু সেই স্কুলই যদি একটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে সমাজের জন্য এক চরম অশনিসংকেত। বিহারের মণিপুরায় এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে স্কুলের বকেয়া ফি পরিশোধ করতে না পারায় এক নাবালককে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরে শিশুটির মা যখন ফি নিয়ে স্কুলে পৌঁছান, তখন তিনি দেখেন বন্ধ ঘরে তার ছোট্ট সন্তানের নিথর দেহ। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি বিহারের মুরলিগঞ্জ থানা এলাকার রামপুর পঞ্চায়েতের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটেছে। রামপুরের বাসিন্দা রাকেশ কুমার তার দুই ছেলে, উজ্জ্বল কুমার এবং আনন্দ কুমারকে স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। উজ্জ্বল বড় এবং আনন্দ ছোট, সে প্রথম শ্রেণিতে পড়তো। দুই ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় রাকেশ তাদের স্কুলের হোস্টেলে রেখে পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছিলেন।

কিছুদিন আগে উজ্জ্বল বাড়িতে জানায় যে সে তার ছোট ভাই আনন্দকে বেশ কিছুদিন ধরে ক্লাসে দেখতে পাচ্ছে না। এরপর আনন্দের মা স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শিশুটির মায়ের অভিযোগ, স্কুলের ডিরেক্টর তাকে জানান যে প্রথমে বকেয়া ফি পরিশোধ করতে হবে, তারপরই ছেলের সাথে দেখা করতে দেওয়া হবে।

স্কুলের নির্দেশ অনুযায়ী আনন্দের মা ফি নিয়ে স্কুলে যান। তার দাবি, কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাকে টাকা জমা দিতে বলেন। এরপর একজন শিক্ষক তাকে স্কুলের একটি তালাবন্ধ কক্ষে নিয়ে যান। তালা খুলে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে আনন্দকে মৃত অবস্থায় দেখে তার মা আর্তনাদে ভেঙে পড়েন।

এখানেই শেষ নয়, অভিযোগ উঠেছে যে এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ শিশুটির দেহ একটি বাইকে করে হাসপাতালে পাঠায় এবং সেখান থেকে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এই খবর গ্রামে পৌঁছাতেই গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং মৃতদেহ নিয়ে স্কুলের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। কিন্তু ততক্ষণে স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা স্কুল বন্ধ করে পালিয়ে যান।

গোটা ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। রামপুরের বাসিন্দা অমিত যাদব বলেন, “স্কুল প্রশাসন এবং অপারেটরদের প্রভাবের কারণে এই ধরনের ঘটনাগুলি প্রতি মুহূর্তে চাপা পড়ে যাচ্ছে।” এই ঘটনা বিহারের বেসরকারি স্কুলগুলোর বিরুদ্ধে ফি সংক্রান্ত অনিয়ম এবং অমানবিক আচরণের প্রশ্ন তুলেছে। প্রশাসন কীভাবে এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।