“এপ্রিল নয়, ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশে ভোট? “-BNP-র শর্ত মেনে নিলেন উপদেষ্টা ইউনূস?

বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলে নয়, বরং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর এমনটাই আভাস দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তবে, তিনি জোর দিয়েছেন, এর জন্য পর্যাপ্ত সংস্কার এবং বিচারিক অগ্রগতির প্রয়োজন।

শুক্রবার লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় এই বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক। বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এই সম্ভাব্য নির্বাচনের তারিখের কথা জানান ইউনূস, যা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনের স্থানীয় সময় অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে তারেক রহমান এবং মুহাম্মদ ইউনূসের এই বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারেক রহমান রমজানের আগে ভোট করার প্রস্তাব দেন। তিনি ইউনূসকে জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ারও একই ইচ্ছা। ইউনূস আশ্বাস দেন, যদি সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়, তাহলে রমজান মাসের আগের সপ্তাহে নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে, এর জন্য উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সংস্কার এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার পর্যাপ্ত অগ্রগতি অত্যাবশ্যক।

উল্লেখ্য, এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। তাদের যুক্তি ছিল, এপ্রিল মাসে আবহাওয়া নির্বাচনের অনুকূলে থাকে না। এ সময়ে মাত্রাতিরিক্ত গরম, আকস্মিক নিম্নচাপ এবং ঝড়ের আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও, প্রস্তাবিত ভোটের সময়টি ছিল রমজান মাসের পরপরই, যা প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে সমস্যা তৈরি করত। একই সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা থাকায় এপ্রিল মাসে ভোট করানোকে খালেদা জিয়ার দল সমস্যাজনক মনে করছিল।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর তারেক রহমানের সঙ্গে ইউনূসের এটিই ছিল প্রথম বৈঠক। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ ছিল প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলায় রাজনৈতিক দলগুলো চলতি বছরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। এই চাপের মুখে পড়ে ইউনূস শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেছিলেন যে ২০২৬ সালে ভোট হবে, তবে এপ্রিলে আগে তা সম্ভব নয়। তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বিএনপি। এই বিরোধিতার আবহে তারেক রহমানের সঙ্গে ইউনূসের এই বৈঠককে অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার দলের দাবিগুলো ইউনূস একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন।