“বাবা বাঁচাও…বাঁচাও…”-গভীর কুয়োর ভিতর থেকে আর্তনাদ ছেলের, তারপর…যা ঘটলো?

‘বাবা… বাবা…’ এই করুণ আর্তনাদ শুনে কুয়োর ধারে ছুটে গিয়েছিলেন বাবা। কুয়োয় ঝুঁকে দেখেই তার চক্ষু চড়কগাছ। গভীর কুয়োর ভিতর পড়ে গেছেন ছেলে, কোনোমতে একটি পাইপের উপর দাঁড়িয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য চিৎকার করছেন। আতঙ্কে আশপাশের লোকজন ডাকেন তিনি। বহু চেষ্টা করেও গভীর কুয়ো থেকে ছেলেকে বের করতে না পেরে দ্রুত খবর দেন দমকলকে। কিন্তু দমকল কর্মীদের শত চেষ্টাতেও সুদীপ্ত ঘোষকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হলো না। অবশেষে উদ্ধার করা হলো তার নিথর দেহ। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জুড়াপানী হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনাটি এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে।

সোমবার সন্ধ্যায়, বছর বিয়াল্লিশের সুদীপ্ত ঘোষ একটি কুয়োতে পড়ে যান। কুয়োর গভীরতা এতটাই ছিল যে, সেখান থেকে তার পক্ষে উঠে আসা সম্ভব ছিল না। নিরুপায় হয়েই সে ‘বাবা… বাবা…’ বলে ডাকতে থাকে, প্রাণ বাঁচানোর জন্য কাতর আর্জি জানায়। ছেলের ডাক শুনেই তার বাবা ছুটে যান কুয়োর ধারে। আশপাশের লোকজনকে ডেকেও যখন কোনো উপায় বের হচ্ছিল না, তখন তিনি দ্রুত ধূপগুড়ি দমকল কেন্দ্রে খবর দেন। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করতে না করতেই এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। কুয়োর ভিতরের পাইপ থেকে নীচে পড়ে তলিয়ে যান সুদীপ্ত। আর শেষ রক্ষা হলো না। জলে ডুবেই প্রাণ হারালেন সুদীপ্ত।

মৃতের বাবা জানান, ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ঠিকমতো ওষুধও খেতেন না। নিজের মতো এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়াতেন। এমনকি তাকেও বহুবার মারধর করেছেন সুদীপ্ত। বাবার অনুমান, কুয়োতেও সে নিজেই চলে গিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে বিপদ আঁচ করতে পেরে এবং সেখান থেকে উঠতে না পেরেই বাবাকে ডাকতে শুরু করেন।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। একজন বাবার সামনে তার সন্তানের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছেন না। মৃতদেহটি ইতিমধ্যেই ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনা আবারও মানসিক স্বাস্থ্য এবং তার সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল।