ইউএসজি যন্ত্র পৌঁছলেও নেই পরিষেবা, পরিষেবা না পেয়ে হতাশায় রোগী ও আত্মীয়-পরিজনরা

পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালকে ঘিরে আবারো হতাশা নেমে এসেছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তড়িঘড়ি একটি ইউএসজি (আল্ট্রাসনোগ্রাফি) মেশিন পাঠানো হলেও, যন্ত্রটি হাসপাতালে পৌঁছানোর পর দেখা গেছে, এর বিভিন্ন অংশ খারাপ। ফলে কবে থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা চালু হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

দীর্ঘদিন ধরেই বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ইউএসজি মেশিনের অভাব ছিল। রোগীদের ইউএসজি করানোর জন্য হাসপাতালের কিছুটা দূরে একটি বেসরকারি পরীক্ষাগারে যেতে হতো। যদিও স্বাস্থ্য দপ্তর দাবি করত, ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি থাকায় ইউএসজির খরচ সরকারই বহন করত।

তবে, গত ৩০ মে এক মর্মান্তিক ঘটনা এই চিত্র পাল্টে দেয়। এক প্রসূতিকে চিকিৎসকরা ইউএসজি করানোর পরামর্শ দেন। বাইরে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার পথে কেশিয়াড়ি মোড়ে থাকা রেললাইনের ওপর লেভেল ক্রসিংয়ের গেট পড়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ সেখানেই আটকে থেকে ওই মহিলা টোটোতেই প্রসব করেন। পরে সদ্যোজাতকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পর স্থানীয়রা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করেন, হাসপাতালে ইউএসজি মেশিন থাকলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও কেন ইউএসজি মেশিন নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।

এই ঘটনার পরেই জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। দ্রুত একটি ইউএসজি মেশিন বেলদা হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শালবনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে থাকা দু’টি ইউএসজি মেশিনের মধ্যে একটিকে বেলদায় স্থানান্তরিত করা হয়। মেশিনটি পৌঁছতেই সবাই স্বস্তি প্রকাশ করেন।

কিন্তু সেই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যন্ত্রটি চালু করতে গিয়েই বিপত্তি। দেখা যায়, মেশিনের স্ক্রিন নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু বাটনও কাজ করছে না। এছাড়াও আরও বেশ কিছু যান্ত্রিক সমস্যা রয়েছে। এক কথায়, মেশিন এলেও তা কার্যতই বিকল। এই ঘটনায় রোগী ও তাদের আত্মীয়-পরিজনদের মধ্যে ফের হতাশা নেমে এসেছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, শালবনি থেকে গাড়িতে করে বেলদায় নিয়ে আসার সময় ঠোকাঠুকির কারণে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বেলদার ব্লক মেডিক্যাল অফিসার আশিস মণ্ডল অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যে সংস্থা থেকে যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল, তাদের খবর দেওয়া হয়েছে। তারা এসে যন্ত্রটা সারিয়ে দিলে ইউএসজি পরিষেবা শুরু হয়ে যাবে।”

তবে, এই আশ্বাসের পরেও কবে এই পরিষেবা চালু হবে, তা নিয়ে সংশয় কাটছে না। একটি অপরিহার্য যন্ত্রের এমন অপ্রত্যাশিত ক্ষতির ফলে বেলদা এলাকার সাধারণ মানুষ আবারো দুর্ভোগের মুখে পড়লেন। প্রসূতির মৃত্যুর মতো ঘটনা এড়াতে দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি উঠেছে সর্বস্তরে। এখন দেখার বিষয়, কবে নাগাদ এই ‘বিকল’ ইউএসজি মেশিন সচল হয় এবং বেলদার মানুষ সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা পায়।