“প্রমাণ থাকলে চিঠি কেন লিখছেন না?”-‘ম্যাচ ফিক্সিং’ তত্ত্ব নিয়ে রাহুলকে প্রশ্ন নির্বাচন কমিশনের

লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি একের পর এক সভা এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে পরোক্ষভাবে নির্বাচন কমিশনের (ECI) বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করে চলেছেন। তার এই ‘অপ্রমাণিত’ অভিযোগগুলো নিয়ে এবার সরাসরি পাল্টা জবাব দিয়েছে কমিশন, যা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাহুল সরাসরি কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করলেও, তার মন্তব্যগুলো কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কমিশনের অসন্তোষ: তথ্যপ্রমাণহীন অভিযোগের ছড়াছড়ি?
নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, রাহুল গান্ধী কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলেছেন। রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলছে যে কেন রাহুল গান্ধী তার অভিযোগগুলো নিয়ে সরাসরি কমিশনকে প্রশ্ন করছেন না বা কোনো লিখিত চিঠি দিচ্ছেন না। বিজেপি শিবির দাবি করছে, বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেবলমাত্র রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি করতেই রাহুল গান্ধী এমন আচরণ করছেন।
মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফল: কমিশনের স্পষ্ট জবাব
সম্প্রতি মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে রাহুল গান্ধীর দাবিকে ‘অস্পষ্ট এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’ বলে খারিজ করে দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে যে, নির্বাচনী ফলাফল প্রতিকূলে গেলেই নির্বাচন কমিশনকে অপমান করার চেষ্টা করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
কমিশন আরও জানিয়েছে যে, পুরো ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হয়েছিল এবং সমস্ত রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। রাহুল গান্ধীর ‘ফিক্সিং’ দাবি খারিজ করে কমিশন উল্লেখ করেছে যে, কংগ্রেসের অনুমোদিত এজেন্টরা কখনও অস্বাভাবিক ভোটগ্রহণ সম্পর্কে কোনো আপত্তি বা অভিযোগ তোলেননি সেই সময়।
CJI-কে অপসারণের অভিযোগ ও কমিশনের প্রতিক্রিয়া
রাহুল গান্ধীর আরেকটি অভিযোগ ছিল যে, নির্বাচন কমিশনার এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইন সংশোধন করে কেন্দ্র সুবিধা নিয়েছে, কারণ প্যানেল থেকে ভারতের প্রধান বিচারপতি (CJI)-কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাহুল গান্ধীর এই অভিযোগগুলিকেও ‘অপ্রমাণিত’ আখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গত বছর মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরপরই কংগ্রেসের উত্থাপিত একই অভিযোগের জবাব তারা দিয়েছিল। কমিশন উল্লেখ করেছে যে, ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন কংগ্রেসকে দেওয়া জবাবে এই সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছিল, যা কমিশনের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে। কমিশন মনে করছে, রাহুল গান্ধী বারবার এই ধরনের বিষয় উত্থাপন করার সময় এই সমস্ত তথ্য সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করছেন।
বিজেপির কড়া প্রতিক্রিয়া: ‘রাহুলকে ঘুম থেকে জাগানো দরকার’
রাহুল গান্ধীর অভিযোগ খণ্ডন করতে গেরুয়া শিবিরও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস বলেন, “রাহুল গান্ধী তো ভোটের আগেই হার মেনে বসে আছেন। উনি এমন মন্তব্য করতে থাকেন আর তাঁর দল হারতে থাকে। রাহুল গান্ধীকে এবার ঘুম থেকে জাগানো দরকার।”
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য বলেন, “রাহুলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। কংগ্রেস যখন জেতে তখন ব্যবস্থা স্বচ্ছ। কিন্তু কংগ্রেস হারলেই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়।”
রাহুল গান্ধীর এই লাগাতার অভিযোগ এবং নির্বাচন কমিশন ও বিজেপির পাল্টা জবাবে দেশের রাজনৈতিক আবহাওয়া আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।