মঙ্গলে নয় বুধে শুরু হবে যাত্রা, নয়া ইতিহাস তৈরির অপেক্ষায় ভারতের শুভাংশু

মহাকাশ অভিযান নিয়ে তৈরি হওয়া টান টান উত্তেজনা আপাতত কিছুটা থমকে গেল। খারাপ আবহাওয়ার কারণে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান-এর নির্ধারিত উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও, এখন আগামী ১১ জুন, বুধবার স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের এই ঐতিহাসিক অভিযান সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

এই অভিযান ভারতের জন্য এক বিশাল গর্বের কারণ। কারণ, এই মহাকাশযানে রয়েছেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। রাকেশ শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে তিনি মহাকাশে পাড়ি দিতে চলেছেন। ১৯৮৪ সালের পর ২০২৫ – দীর্ঘ ৪১ বছরের প্রতীক্ষার পর একজন ভারতীয় নভোচারী নাসার একটি মিশনে মহাকাশে যাচ্ছেন, যা দেশের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২২ মিনিটে (ভারতীয় সময় বিকেল ৫:৫৪ মিনিটে) স্পেস-এক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানের রওনা দেওয়ার কথা ছিল। উৎক্ষেপণের পূর্ণাঙ্গ মহড়াও সম্পন্ন হয়েছিল এবং কাউন্টডাউন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। মহাকাশচারী পেগি হুইটসনের নেতৃত্বে স্পেসএক্স ফ্লাইট স্যুট পরে অ্যাসেম্বলি ভবন থেকে মহাকাশযানে প্রবেশ পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার মহড়াও সফলভাবে শেষ হয়েছে। এবার শুধু অপেক্ষার পালা।

অভিযানের লক্ষ্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
এই অভিযানে আমেরিকা, ভারত, পোল্যান্ড এবং হাঙ্গেরির চার জন মহাকাশচারী ১৪ দিনের জন্য মহাকাশে যাচ্ছেন। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য হলো ৬০টি ভিন্ন বিষয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো। জৈবিক এবং বস্তুগত বিজ্ঞান, মহাকাশ থেকে পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণা চলবে, যা নাসার এই টিমকে মহাকাশে পাঠাচ্ছে।

এই অভিযানটি একাধিক কারণে ঐতিহাসিক:

এটি চার সদস্যকে নিয়ে স্পেস এক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’-এর প্রথম পাড়ি।
৪২ বছরের অপেক্ষার পর দ্বিতীয়বারের মতো কোনো ভারতীয় নাসার অভিযানে মহাকাশে যাচ্ছেন।
প্রাথমিকভাবে, ইসরো (ISRO) এই মিশনের জন্য দু’জনকে বেছে নিয়েছিল। শুভাংশু ছাড়াও প্রশান্ত বালাকৃষ্ণন নায়ারকেও এই অভিযানের জন্য প্রস্তুত করা হয়। দু’জনেই ভারতীয় বায়ুসেনার ক্যাপ্টেন। তবে শেষ পর্যন্ত শুভাংশুই এই ঐতিহাসিক যাত্রার অংশ হচ্ছেন।

শুভাংশুর উচ্ছ্বাস: ‘অসাধারণ যাত্রা’
এই মিশন নিয়ে শুরু থেকেই উচ্ছ্বসিত শুভাংশু শুক্লা। তাঁর কথায়, “এই পর্যন্ত আসাটা একটা অসাধারণ যাত্রা। এই মুহূর্তগুলি বলে দেয় যে আপনি এমন কিছুর অংশ হতে চলেছেন, যা আপনার চেয়ে অনেক বড়। আমি কেবল বলতে পারি যে আমি খুবই ভাগ্যবান এই অভিযানের অংশ হতে পেরে।”

শুভাংশু শুক্লার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১৯৮৫ সালে উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে জন্মগ্রহণ করেন শুভাংশু। কার্গিল যুদ্ধে ভারতীয় সেনার পরাক্রম দেখেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেন। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ২০০৬ সালের জুন মাসে তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফাইটার স্ট্রিম-এ যোগ দেন। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি মিগ-২১, মিগ-২৯, সুখোই এসইউ-৩০, ডর্নিয়ার এবং হকের মতো ফাইটার জেট মোট ২,০০০ ঘণ্টা ওড়ানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি উইং কমান্ডার হন। একই বছর ইনস্টিটিউট অফ অ্যারোস্পেস মেডিসিন (IAM)-এর মাধ্যমে তাঁকে IAF এর মহাকাশচারী নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়। ভারতের ‘গগনযান’ মিশনের জন্য নির্বাচিত চারজন মহাকাশচারীর (প্রশান্ত বালকৃষ্ণন নায়ার, অজিত কৃষ্ণন এবং অঙ্গদ প্রতাপের সঙ্গে) মধ্যেও রয়েছেন শুভাংশু শুক্লা।

অপেক্ষার প্রহর গুনছে গোটা দেশ। শুভাংশু শুক্লার এই অভিযান ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে।