“বাংলাদেশি ছাত্রনেতা, অথচ কাকদ্বীপের ভোটার!”-নিউটন দাসকে ঘিরে রহস্য ও রাজনৈতিক তরজা

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ, নিউটন দাস নামের এক যুবককে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কারণ, তিনি একই সাথে বাংলাদেশের ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত হলেও, তার নাম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপের ভোটার তালিকায়! এই আজব সমন্বয় জন্ম দিয়েছে তুমুল বিতর্কের।

২০২৪ সালের বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিউটনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল। সেই সময় তাকে একজন সক্রিয় বাংলাদেশি ছাত্রনেতা হিসেবেই চিনত সবাই। কিন্তু সম্প্রতি যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি আদতে ভারতীয় নাগরিক। নিউটনের নিজেরও দাবি, তিনি নাকি ২০১৪ সাল থেকেই ভারতের নাগরিক এবং পশ্চিমবঙ্গের ভোটার। শুধু তাই নয়, তিনি ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোটও দিয়েছেন বলে জানান।

কাকদ্বীপের ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই নিউটন দাস একটি ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওতে তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন যে, তিনি সম্পূর্ণ ভারতীয় নাগরিক এবং তার কাছে ভারতের ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড উভয়ই রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলেও তিনি জানান। নিউটনের বক্তব্য, ২০২৪ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি একবার বাংলাদেশে গিয়েছিলেন এবং সেই সময়ই সেদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালে তিনি তৃণমূল প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরাকে ভোট দিয়েছিলেন। এরপর ২০১৭ সালে তিনি তার ভোটার কার্ড হারিয়ে ফেলেন, কিন্তু পরবর্তীতে একজন বিধায়কের হস্তক্ষেপে পুনরায় ভোটার কার্ড পান।

তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ও বিজেপির অভিযোগ
নিউটন দাসের নাম কাকদ্বীপের ভোটার তালিকায় থাকার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরপরই রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। শুধু ভোটার তালিকায় নাম থাকা নয়, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। জন্মদিনে কেক কাটার ছবিও ছড়িয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে ছবির ব্যক্তিই বাংলাদেশের কোটা আন্দোলনের পরিচিত মুখ নিউটন দাস।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে। বিজেপির অভিযোগ, বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও নিউটন দাস ভারতের ভোটার হয়েছেন এবং এর পেছনে শাসক দলের মদদ রয়েছে। গেরুয়া শিবিরের নেতাকর্মীরা নিউটনের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্রনেতাদের ছবি পোস্ট করে এই অভিযোগ আরও জোরালো করার চেষ্টা করছেন। বিজেপির দাবি, নিউটন একসময় কাকদ্বীপের স্বামী বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতের দাসপাড়ায় থাকতেন, যদিও তার পরিবার বাংলাদেশের বাসিন্দা।

অনুপ্রবেশ ও ‘ভুয়ো ভোটার’ বিতর্কের নতুন মাত্রা
সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ এবং অবৈধ ভোটার কার্ড ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছে। তাদের অভিযোগের তির মূলত শাসক দলের দিকে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেস পাল্টা দাবি করেছে যে, সীমান্তরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের এবং বিএসএফ যদি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারে, তাহলে তার দায়ভার কেন্দ্রীয় সরকারের।

শুধু নিউটন দাসের ঘটনাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ভুয়ো ভোটার’ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, নির্বাচন কমিশনের মদদেই ভোটার তালিকায় এই ধরনের গরমিল হচ্ছে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ভূতুড়ে ভোটার’ চিহ্নিতকরণে একটি কমিটিও গঠন করেছেন। এই পরিস্থিতিতে নিউটন দাসকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন করে তীব্র তরজার জন্ম দিয়েছে, যা আসন্ন সময়ে আরও বড় রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিতে পারে।