রিলস ভিডিও বানাতে গিয়ে মৃত ২ তরুণ, ফ্লাইওভারে স্টান্ট করতে গিয়ে ঘটলো দুর্ঘটনা

সাম্প্রতিক সময়ে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরের ভবানীপুরে নবনির্মিত ফ্লাইওভারটি যেন আনন্দের বদলে মৃত্যুর দূত হয়ে দেখা দিয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই এই সেতুতে উঠতি বয়সের যুবকদের বেপরোয়া বাইক স্টান্টের বাড়বাড়ন্ত চলছিল, যার মর্মান্তিক পরিণতি ঘটল গত রবিবার। দুঃসাহসিক কসরত দেখাতে গিয়ে দুই বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন দুই যুবক। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও জনরোষের সৃষ্টি হয়েছে।

হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি মনোজিৎ সরকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফ্লাইওভারে ২৪ ঘণ্টা সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও আলো বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এই উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? স্থানীয়দের প্রশ্ন, বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও কেন প্রশাসনের টনক নড়েনি, কেন দুটি তরতাজা প্রাণ ঝরে যাওয়ার পর এই পদক্ষেপ?

গত রবিবার রাতে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ফ্লাইওভারের মুখে দুটি বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত হন একজন তরুণ ও তিন স্কুলছাত্র। তাদের মালদা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার সকালে পিপলা গ্রামের বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী পবিত্র দাস নামে এক বাইকচালকের মৃত্যু হয়। সেই রাতেই অঙ্গারমণির বাসিন্দা ১৫ বছর বয়সী দশম শ্রেণির ছাত্র আক্তার ওয়াজ ওরফে তনুজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

আক্তারের সঙ্গে থাকা মহম্মদ রাজকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতায় রেফার করা হয়েছে এবং তৃতীয় কিশোর মালদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই তিনজনই ছিল নাবালক। অর্থাৎ, তাদের কারওরই বাইক চালানোর লাইসেন্স ছিল না। ভিডিও তৈরির উন্মাদনায় তিন নাবালক একটি বাইকে স্টান্ট করতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটায়।

ঘটনার পর থেকেই এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তারা পথ অবরোধ করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করেছে, যদিও প্রশাসন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্থানীয়দের প্রধান ক্ষোভ হলো – বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ফ্লাইওভারে আলো বসানো বা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ। সন্ধ্যা নামলেই এই ফ্লাইওভারটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

মৃত পবিত্র দাসের দাদা রামদেব দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান, পবিত্র তার বাবাকে আনতে যাচ্ছিল। ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে উল্টো দিক থেকে তিনজন কিশোর তার বাইকে সজোরে ধাক্কা মারে। তারা দ্রুতগতিতে আসছিল এবং বাইকে স্টান্ট করার ভিডিও তৈরি করছিল। রামদেব দাসের আক্ষেপ, “যদি পুলিশের নজরদারি থাকত, তাহলে হয়তো আমার ভাইকে হারাতে হত না।”

এই মর্মান্তিক ঘটনা কেবল দুটি পরিবারের জীবনকেই ওলটপালট করে দেয়নি, বরং নবনির্মিত অবকাঠামোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব এবং উঠতি বয়সের মধ্যে বেপরোয়া স্টান্টবাজির প্রবণতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয় প্রশাসন কি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে, নাকি এই ফ্লাইওভার আরও প্রাণহানির সাক্ষী হবে – এখন সেটাই দেখার।