চোখের চিকিৎসায় আর যেতে হবে না কলকাতা-গুয়াহাটি, নয়া চক্ষু হাসপাতাল হচ্ছে আগরতলাতেই

ত্রিপুরার মানুষের কাছে সুস্থ ও স্বচ্ছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। তাদের মূল লক্ষ্য হলো রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম ও শহরের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। জনজীবনের অগ্রাধিকারগুলোকে মাথায় রেখে কাজ করার পাশাপাশি, ত্রিপুরায় এইমসের মতো উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করাও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। এই দিশায় কাজ করতে গিয়ে, আইএলএস হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি ১০০ আসনের অত্যাধুনিক চক্ষু হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা এই ঘোষণা করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্মদিন উপলক্ষে ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যে ‘প্রতি ঘরে সুশাসন’ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এই অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে ‘প্রতি ঘরে সুশাসন.২’ কার্যক্রম শুরু করা হয়। এই কার্যক্রমগুলো প্রমাণ করে সরকার মানুষের প্রতি কতটা আন্তরিক এবং দায়বদ্ধ। মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধান করাই এই সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। এই দুই পর্যায়ে বিভিন্ন ব্লক, পুরসভা, নগর পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটি এবং মহকুমা মিলিয়ে ৪,৬০০টিরও বেশি শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সরকারের লক্ষ্য শুধু বড় বড় ভবন তৈরি করা নয়। তাদের প্রধান লক্ষ্য হলো মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, রাস্তাঘাট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ সব ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়ন সাধন করা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শুধু একটি শহর বা গ্রামের উন্নয়ন করে সামগ্রিক কাজের কাজ হবে না। ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ত্রিপুরাও এগিয়ে চলেছে। বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে মাথাপিছু আয় এবং স্টেট জিএসটির ক্ষেত্রে ত্রিপুরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে, যা রাজ্যের অগ্রগতি নির্দেশ করে।
সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব ইনভেস্ট সামিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দেশ ও বিদেশের বহু বিনিয়োগকারী অংশ নেন। এই সামিটে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ৩০,০০০ কোটি টাকার সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়, যার মধ্যে ত্রিপুরার জন্য ১৫,৮০০ কোটি টাকার সমঝোতা স্মারক রয়েছে। বর্তমানে ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো, দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা এই দিক দিয়ে বেশ ভালো অবস্থানে আছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘হীরা মডেল’ (হাইওয়ে, ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ে) অনুসরণ করে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং বিমান যোগাযোগের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, যার সুফল রাজ্যের মানুষ পাচ্ছেন। বিনিয়োগকারীরা এখন ত্রিপুরায় আসতে আগ্রহী। মানুষের মৌলিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি, ‘মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা’য় সমস্ত অংশের মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। প্রাণী সম্পদ, মৎস্য, নগর পরিকাঠামো এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্যও রাজ্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, গত ২৯শে মে রাজ্যে ‘বিকশিত কৃষি সংকল্প অভিযান’-এর সূচনা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লক্ষ ৭২ হাজারের বেশি কৃষককে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মোট ৮৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিতে একযোগে এই অভিযান চালানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষি ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন দিশা দেখিয়েছেন। ২০১৬ সালে কৃষকদের গড় আয় ছিল মাত্র ৬,৫৮০ টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে ১৩,৫৯০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় ত্রিপুরা জাতীয় স্তরে ৭টি পুরস্কার পেয়েছে, এবং গোমতী ও ধলাই জেলা জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। মহারাষ্ট্র ও আসাম থেকে আসা প্রতিনিধি দল ত্রিপুরার পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার কাজের প্রশংসা করেছে।
জনগণের কল্যাণে রাজ্যে ‘আমার সরকার’ পোর্টাল চালু করা হয়েছে, যা প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে। এছাড়াও, রাজ্যে ই-অফিস ব্যবস্থাপনা চালু হয়েছে, যার ফলে ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে জেলা, মহকুমা এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েত পর্যন্ত পেপারলেস কাজকর্ম শুরু হয়েছে। জনসাধারণের সুবিধার্থে সিএম হেল্পলাইন এবং মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু কার্যক্রম চালু হয়েছে, যার মাধ্যমে মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন। চা শ্রমিকদের উন্নয়নেও রাজ্য সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং ‘চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে’ মোহনপুর মহকুমায় এখন পর্যন্ত ২৪১টি পাট্টা বিতরণ করা হয়েছে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী এদিন আবারও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। মাদকের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। সমাজের সকল অংশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও, স্বেচ্ছায় রক্তদানের গুরুত্ব এবং রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা সম্পর্কিত বিষয় নিয়েও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন।