চিন্নাস্বামীর উল্লাসে মিশে গেল আর্তনাদ! মৃত্যু ১১ জনের, সরকারের দায় কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীর জবাব ঘিরে বিতর্ক

বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, যা সেদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)-এর আইপিএল জয়ের ঐতিহাসিক উল্লাসের সাক্ষী ছিল, সেই একই দিনে তার বাইরের চিত্র ছিল চরম বিপরীত। স্টেডিয়ামের ভিতরে যখন রঙ, আলো আর হর্ষধ্বনিতে বিরাট কোহলির দলের প্রথম ট্রফি জয়ের উৎসব চলছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই বাইরে চলছিল হাহাকার, কান্না আর প্রাণ বাঁচানোর আকুতি। প্রবল ভিড় ও বিশৃঙ্খলার জেরে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন। এই ঘটনায় গোটা কর্ণাটকে শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং রাজ্য সরকার চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে।
মানবিকতার প্রশ্নে প্রশ্নবিদ্ধ উৎসব
এই ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন – যখন স্টেডিয়ামের বাইরে এমন বিপর্যয় ঘটছিল, তখন ভেতরে কীভাবে এমন উৎসব চলতে পারে? কীভাবে বিজয়ের আনন্দে মাতোয়ারা থাকতে পারে একদল মানুষ, যখন বাইরেই সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন? এই মানবিক বৈপরীত্য নিয়েই এখন রাজ্য রাজনীতি ও সামাজিক পরিমণ্ডল তোলপাড়।
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া নিজেও এ ঘটনায় কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। তিনি তখন স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে সরকারি পর্যায়ে ভিআইপি উপস্থিতি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিজয় উদযাপনের ব্যবস্থা চলছিল। এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “এই ধরনের একাধিক পদপিষ্টের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। এমনকি, এর থেকেও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটেছে। কুম্ভ মেলাতেও হয়েছিল, সেখানেও ৫০-৬০ জন মারা গিয়েছিলেন।” যদিও তিনি জানান, এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতির অবনতি বা সরকারের ব্যর্থতাকে ন্যায্যতা দিচ্ছেন না।
দায় এড়ানোর অভিযোগ, চাপ বাড়ছে সরকারের উপর
তবে বিরোধী দলগুলোর বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আসলে দায় এড়ানোর কৌশল। মানুষের মৃত্যুতে সংবেদনশীলতা না দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য আরও জনরোষ তৈরি করেছে। কংগ্রেস সরকারের উপর চাপ বেড়েছে, বিশেষত নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এত বড় মাপের একটি ম্যাচের দিন, যেখানে লাখো মানুষের জমায়েত হবে তা জানা সত্ত্বেও, পর্যাপ্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ।
আরসিবি’র উদযাপন নিয়েও বিতর্ক
এদিকে, আরসিবি দলের জয়ও এখন কিছুটা বিতর্কিত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। বহু সমর্থক ও বিশিষ্টজন সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, “উৎসব থামাতে না হোক, অন্তত শোকপ্রকাশ করা বা কিছুক্ষণের জন্য অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা উচিত ছিল। এই ট্রফি উৎসব হতে পারত আরেকদিন। কিন্তু যে প্রাণগুলো গেল, তাদের ফিরিয়ে আনা যাবে না।”
তবে অন্যপক্ষের যুক্তি – একটি জয় বহু বছরের স্বপ্নপূরণ, সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। উৎসব হতেই পারে, তবে প্রশাসনিক দায়িত্বে গাফিলতি হলে সেটার দায় সরকারকেই নিতে হবে।
সর্বোপরি, এই ঘটনার মাধ্যমে আমাদের চোখে আরও একবার স্পষ্ট হলো – সমাজের একাংশ উৎসবে ভাসলেও অন্য অংশ ডুবে থাকে শোকে। প্রশাসনের দায়ভার, মানবিকতা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার প্রশ্নে যেন ভবিষ্যতে এমন আরেকটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য আমাদের দেখতে না হয়। চিন্নাস্বামীর বাইরের সেই করুণ আর্তনাদ যেন কেবল একটি সংখ্যা না হয়ে থেকে যায় – তার থেকে শিখে ভবিষ্যতের পথ হোক আরও মানবিক, আরও সংবেদনশীল।