মেঘালয়ে রহস্যময় নবদম্পতি নিখোঁজ! মিলল রক্ত মাখা রেনকোট, কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে?

বিয়ের পর হানিমুনে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এক নবদম্পতিকে ঘিরে মেঘালয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। প্রথমে স্বামী নিখোঁজ হন, এরপর তার ১১ দিন পর উদ্ধার হয় পচাগলা দেহ। এখনও নিখোঁজ তার স্ত্রী। ঠিক কী ঘটেছিল এই দম্পতির সাথে? কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে? কেনই বা তাদের খুন করা হলো? স্ত্রীর খোঁজ না পাওয়ায় উত্তরগুলো আরও জটিল হচ্ছে।
ইনদওরের ব্যবসায়ী রাজা রঘুবংশীর পচাগলা দেহের পাশেই এর আগে খুনে ব্যবহৃত একটি বড় কাটারি উদ্ধার হয়েছিল। এবার বুধবার সোহরা অঞ্চলের মওকমা রোডের কাছে রক্তের দাগযুক্ত একটি রেনকোট বা বর্ষাতি উদ্ধার হয়েছে। এটি সম্ভবত নিখোঁজ পর্যটক তথা রাজার স্ত্রী সোনম রঘুবংশীর বলে মনে করা হচ্ছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য রেনকোটটি পাঠানো হয়েছে।
রেনকোটে রক্তের দাগ, ফরেনসিক পরীক্ষার অপেক্ষায় পুলিশ
ইস্ট খাসি হিলসের পুলিশ সুপার বিবেক সিয়েন জানিয়েছেন, “আমরা একটি ভেজা রেইনকোট উদ্ধার করেছি। এতে কিছু দাগ আছে। তবে, আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না যে এই দাগগুলো রক্তেরই কি না। একমাত্র ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমেই তা বোঝা সম্ভব।” উদ্ধার হওয়া রেনকোটটি XXXL আকারের। ঘটনার দিন ও আগের দিনের ভিডিও ফুটেজের সাথে তুলনা করে দেখা হচ্ছে সেটি সোনম রঘুবংশীর কি না। ভিজ্যুয়াল ম্যাচিং এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে সময় লাগবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
তল্লাশি অভিযানে প্রাকৃতিক বাধা
মেঘালয়ের সোহরার ওয়েইসাওডং ঝরনা সংলগ্ন এলাকার জঙ্গলাকীর্ণ জায়গা জুড়ে এই অনুসন্ধান অভিযান চলছে। কারণ, এই জঙ্গলেই কিছু একটা ঘটেছিল ওই দম্পতির সাথে। বর্তমানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তল্লাশি অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। এসপি সিয়েন জানান যে, NESAC থেকে মাঝেমধ্যে ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে আকাশপথে অনুসন্ধান চালানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “এখন আবহাওয়া কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। নাহলে টানা খারাপ আবহাওয়া চলছিল এবং মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। এই বৃষ্টিতে তল্লাশি অভিযান চালানো বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও আমরা NESAC ড্রোন ব্যবহার করেছি।”
স্বামীর দেহ ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার
এই ড্রোনের সাহায্যেই গত সোমবার ওয়েইসাওডং ঝরনার কাছে একটি গিরিখাতে সোনমের স্বামী রাজা রঘুবংশীর মৃতদেহ দেখতে পাওয়া যায়। রাজার পচাগলা মৃতদেহের সাথে একটি চাপাতি, একজন মহিলার সাদা শার্ট, ওষুধের একটি স্ট্রিপ, একটি মোবাইল ফোনের এলসিডি স্ক্রিনের একটি অংশ এবং একটি স্মার্টওয়াচ উদ্ধার করা হয়েছে।
এসপি সিয়েনের মতে, ব্যাপক অনুসন্ধানের জন্য ৫০ থেকে ৬০ জনেরও বেশি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস, স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি), স্পেশাল অপারেশনস টিম (এসওটি) এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের দল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এই দম্পতি গত ২২ মে মাওলাখিয়াত গ্রামে গিয়েছিলেন এবং নোংরিয়াতে রাত কাটিয়েছিলেন। এরপর ২৪ মে শিলং-সোহরা সড়কের পাশে একটি ক্যাফের বাইরে তাদের স্কুটারটি পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া যায়। তারপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি, যা এই রহস্যকে আরও গভীর করেছে।