বিজয়োল্লাস পরিণত হলো মৃত্যুমিছিলে! পুলিশের বারণ সত্ত্বেও চিন্নাস্বামীতে জনস্রোত, কেড়ে নিল ১১ প্রাণ

পুলিশের বারবার বারণ সত্ত্বেও গত ৪ জুন বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আরসিবি-র বিজয় উদযাপনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া পদপিষ্টের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জন, এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন। স্টেডিয়ামের বাইরে ও ভিতরে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড়, আর ভেতরে ঢোকার জন্য হুড়োহুড়িই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ বলে জানা গেছে।

উৎসবের আমেজ বদলে গেল শোকে
গত মঙ্গলবার আরসিবি আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই বেঙ্গালুরুর রাস্তায় উৎসবের মেজাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু পরের দিনই যে এমন ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। জয়ের আনন্দ মুহূর্তেই পরিণত হয় শোকে।

পুলিশের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অনুষ্ঠান!
ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার রাতে, যখন আরসিবি কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে, কর্ণাটক বিধান সৌধ থেকে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম পর্যন্ত হুডখোলা বাসে বিজয় শোভাযাত্রা করা হবে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর তীব্র যানজটের কথা মাথায় রেখে পুলিশ এই প্যারেডের অনুমতি দেয়নি। বিরাট কোহলিরা বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে নেমেই সরাসরি হোটেলে চলে যান এবং বিকেল সাড়ে পাঁচটায় স্টেডিয়ামে আসেন। তবে ততক্ষণে স্টেডিয়ামের বাইরেই ঘটে গেছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

পুলিশের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বারবার জনসচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়েছিল, কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন এবং কোন রাস্তা দিয়ে যাবেন না। এমনকি পুলিশের দাবি, আরসিবি কর্তৃপক্ষ ও কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে বুধবারের অনুষ্ঠানটি বাতিল করে পরে করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কারণ, ভক্তদের মধ্যে এই অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যাপক উন্মাদনা ছিল, যা থেকে বিপদ ঘটার সম্ভাবনা ছিল। আর সেটাই বাস্তবে ঘটেছে।

আরসিবি’র ‘অসহযোগিতা’র অভিযোগ পুলিশের
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ প্রশাসনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “আমরা আরসিবি ও কর্ণাটক ক্রিকেট সংস্থাকে অনুরোধ করেছিলাম রবিবার অনুষ্ঠান করার জন্য। কিন্তু তারা রাজি হননি। এমনকি ভিক্টরি প্যারেড করতেও বারণ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল স্টেডিয়ামে এসে অনুষ্ঠান করার জন্য।”

পুলিশের দাবি, আরসিবি এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এক পুলিশকর্তার কথায়, “বুধবার সকাল পর্যন্ত সমস্ত পুলিশকর্মী, শীর্ষ আধিকারিকরা রাস্তায় ছিলেন। ডিউটি করতে করতে ক্লান্ত ছিলেন। ভক্তদের এই উন্মাদনা আগে দেখিনি।”

এই ঘটনা আবারও বড় জনসমাগম ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে স্টেডিয়ামের দিকে যেতে দেওয়া হলো, তা নিয়ে তদন্তের প্রয়োজন।