২৫% DA দিতে হিমশিম রাজ্য সরকার! সুদ সহ মিলবে কেন্দ্রের সমান DA? সরকারি কর্মীদের জন্য বিরাট ঘোষণা

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তদের ২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (DA) দিতে গিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এমনিতেই টালমাটাল অর্থনীতির মধ্যে এই নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সামনে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে রাজ্যের মোট ঋণের পরিমাণ নাকি রাজ্যের জিডিপি-র প্রায় ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে, যা সরকারের আর্থিক সংকটের গভীরতাকেই তুলে ধরছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের সরকারি কর্মী ও অবসরপ্রাপ্তদের ২৫% ডিএ দিতে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বা তারও বেশি টাকা খরচ হবে। রাজ্যের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে এই বিশাল অঙ্কের অর্থ সংস্থান করা যে কতটা কঠিন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। বকেয়া ডিএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের এই কড়া নির্দেশকে ‘আগুনে ঘি ঢালার মতো’ পরিস্থিতি বলে আখ্যা দিয়েছেন অনেকে।
পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বকেয়া ডিএ পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এবার সুপ্রিম কোর্ট সেই দাবিতে সবুজ সংকেত দেওয়ায় সরকারি কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক স্বস্তি ফিরেছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে ‘অভাবনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাজ্য সরকারি কর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অধিকার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে এবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ। তাঁর মন্তব্য রাজ্য জুড়ে ব্যাপক শোরগোল ফেলে দিয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “রাজ্য সরকারের এই বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা শুধুমাত্র রাজ্য সরকারি কর্মীরাই উপভোগ করবে তা কিন্তু নয়, বরং পৌরসভা, পঞ্চায়েত, সরকার পোষিত বিদ্যালয় এবং অন্যান্য সমস্ত সরকারি উদ্যোগের কর্মীরাও আইনত মহার্ঘ ভাতার অধিকারী। তাই বকেয়া ডিএ-র প্রতিটি পয়সা, ১০০ শতাংশ সুদসহ আদায় করা হবে।”
ভাস্কর ঘোষ আরও অভিযোগ করেন যে, সরকার প্রথমে তাঁদের এই ডিএ-র লড়াইয়ে ভাঙন ধরাতে চেয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ তিনি জানান যে, কর্মরতদের একাংশকে ডিএ দিয়ে বাকিদের বা অবসরপ্রাপ্তদের না দেওয়ার প্রবণতা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ হতে দেবে না এবং ঐক্যবদ্ধভাবে তার মোকাবিলা করে সকলের জন্য সম্পূর্ণ পাওনা আদায় করবে।
জানা গেছে, শীঘ্রই একটি বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে চলেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। যার মাধ্যমে কর্মীরা পরামর্শ ও সাহায্য চাইতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে ডিএ আদায়ের আন্দোলন আরও গতি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্য সরকারের ওপর একদিকে সুপ্রিম কোর্টের ডিএ-র নির্দেশ কার্যকর করার চাপ, অন্যদিকে রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা – এই জোড়া ফলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার এক কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি সরকার কীভাবে সামাল দেয় এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আন্দোলন কতদূর এগোয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।