বাংলায় কত ভুয়ো ভোটার? একলাফে তালিকা থেকে ব্যাড গেলো ২,০০০ ভোটার

আসন্ন উপনির্বাচনের আগে আবারও ‘ভূতুড়ে ভোটার’ বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এবার বিরোধীদের সরাসরি নিশানায় নদিয়া জেলার কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের সদ্য প্রকাশিত নতুন ভোটার তালিকা থেকে বিপুল সংখ্যক নাম বাদ পড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। একসঙ্গে প্রায় ২ হাজার ভোটারের নাম কীভাবে তালিকা থেকে উধাও হলো, সেই প্রশ্ন তুলেই সরব হয়েছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, নদিয়ার কালীগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক নাসিরউদ্দিন আহমেদের প্রয়াণের পর থেকে এই কেন্দ্রটি প্রতিনিধি শূন্য অবস্থায় ছিল। এবার নতুন বিধায়ক নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। সেই অনুযায়ী, নদিয়া জেলা প্রশাসনও দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করে। প্রায় এক মাস ধরে এই তালিকা সংশোধন চলেছে, যেখানে নতুন ভোটারদের নাম যোগ করা এবং মৃত বা অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ করা হয়েছে।
গত সোমবার ৫ মে কৃষ্ণনগরের জেলা প্রশাসনিক ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেলাশাসক এস তরুণ প্রসাদ কালীগঞ্জ বিধানসভার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন। প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, কালীগঞ্জ বিধানসভায় ৪৮টি নতুন বুথ যুক্ত করে মোট বুথের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৯টি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী, মোট ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৬৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৩৬৩ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছেন ১ লক্ষ ২২ হাজার ৩০৩ জন।
তবে এই নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের পরেই নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র দাবি, সংশোধিত তালিকা থেকে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। বিরোধীদের বক্তব্য, একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক ভোটারের নাম বাদ পড়া এক কথায় ‘রেকর্ড পতন’।
ভোটার তালিকা থেকে এত বিপুল সংখ্যক নাম বাদ পড়া প্রসঙ্গে জেলাশাসক এস তরুণ প্রসাদকে সরাসরি প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কোনো স্পষ্ট উত্তর দেননি। এই পরিস্থিতিতে ‘ভুয়ো ভোটার’ ইস্যুটিকে নতুন করে সামনে এনে বিরোধীরা ফের প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের তীব্র কটাক্ষ, “এই ভুয়ো ভোটারদের উপর ভরসা করেই তো তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনে জয়লাভ করে আসছে। শুধু কালীগঞ্জ নয়, গোটা রাজ্যজুড়েই এই ধরনের ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা প্রচুর।” পদ্মফুল শিবিরের অভিযোগ, ভোটার তালিকা সংশোধনের নামে আসল এবং বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে, অথচ যারা প্রকৃতপক্ষে ‘ভুয়ো’ ভোটার, তাদের নাম তালিকায় বহাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলো। আসন্ন উপনির্বাচনের আগে ‘ভূতুড়ে ভোটার’ বিতর্ক এবং তালিকা থেকে নাম বাদ পড়ার ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ভোটের মুখে এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।