“৯০ হাজার সেনার প্যান্ট আজও ঝুলছে”—পাক সেনাপ্রধানকে কড়া বার্তা দিলেন বালোচ নেতা

কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক নৃশংস জঙ্গি হামলার পটভূমিতে যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে, ঠিক সেই সময়েই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেলুচিস্তান নতুন করে উত্তাল হয়ে উঠেছে। আর এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বকে রীতিমতো কাঁপিয়ে দিয়েছেন বেলুচ ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আখতার মেংগল। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের একটি মন্তব্যের জবাবে মেংগলের বিস্ফোরক বক্তব্য গোটা উপমহাদেশে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
বেলুচ জনগণের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে নিশানা করে পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় বলেছিলেন, “বেলুচিস্তান পাকিস্তানের কপালের ঝুমর।” তিনি আরও দম্ভ করে দাবি করেছিলেন যে, আগামী দশ প্রজন্মেও কেউ বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে পারবে না। সেনাপ্রধানের এই মন্তব্য বেলুচিস্তানে নতুন করে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বেলুচ নেতারা।
সেনাপ্রধানের এই উস্কানিমূলক মন্তব্যের জবাবে বেলুচ ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আখতার মেংগল এমন কিছু কথা বলেছেন, যা পাকিস্তানের সামরিক দম্ভকে এক নিমেষে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। তীব্র কটাক্ষ করে তিনি পাক সেনাপ্রধানকে সরাসরি প্রশ্ন করেছেন, “১৯৭১ সালের লজ্জাজনক পরাজয়ের কথা ভুলে গিয়েছেন?” এখানেই না থেমে মেংগল বলেন, “তোমাদের ৯০ হাজার সৈন্য সেদিন শুধু অস্ত্র নয়, প্যান্টও ফেলে এসেছিল বাংলাদেশে। সেসব আজও সেখানে ঝুলে আছে!” পাক সেনার কঠোর মনোভাবের জবাব দিয়ে তিনি আরও বলেন, “তোমরা বলছো আমাদের আগামী দশ প্রজন্মকে শাস্তি দেবে? তার আগে বলো, তোমাদের নিজেদের কত প্রজন্ম ১৯৭১ সালের সেই অপমানের ইতিহাস ভুলতে পারবে?” মেংগলের এই প্রত্যুত্তর গোটা পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং সামরিক নেতৃত্বের অস্বস্তি বহুগুণ বাড়িয়েছে।
আখতার মেংগল এখানেই থেমে না থেকে পাকিস্তানের হাতে বেলুচ জনগণের দীর্ঘ ৭৫ বছরের দমন-পীড়নের নির্মম ইতিহাসও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা বেলুচরা গত ৭৫ বছর ধরে লাগাতার পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এবং সরকারের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছি। কিন্তু এত অত্যাচার সহ্য করেও আমরা ভয় পাইনি, মাথা নত করিনি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, সমস্ত দমন-পীড়ন সত্ত্বেও বেলুচ জনগণ তাদের অধিকারের দাবিতে অবিচল থাকবে।
আখতার মেংগলের এই সাহসী এবং তীক্ষ্ণ বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই মন্তব্য শুধু বেলুচ জনগণের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদ নয়, বরং পাকিস্তানের ভেতরে সেনাশাসিত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে ওঠা এক শক্তিশালী এবং সাহসী কণ্ঠস্বর। এমন এক সময়ে যখন পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বারবার জঙ্গি মদত দেওয়ার অভিযোগে কোণঠাসা হচ্ছে, তখন মেংগলের এই মন্তব্য পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং সামরিক শাসনের দুর্বলতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে, যা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেবে। বেলুচ জনগণের দীর্ঘদিনের স্বাধীনতার দাবি এবং নির্যাতনের ইতিহাস এই প্রতিবাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভবিষ্যতের এক উত্তপ্ত সংঘাতের ইঙ্গিত দিয়ে গেল— একদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, অন্যদিকে বেলুচ গণআন্দোলন। এই পরিস্থিতি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহে পাকিস্তানের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।