“ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে আপনারা কোন দিকে?”-প্রশ্ন করতেই বোকা বনে গেলেন ইসলাম ধর্মগুরু

পাকিস্তানের ভারতবিরোধী মনোভাব এবং সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে যখন সে দেশের শীর্ষ মহল লাগাতার সরব, ঠিক তখনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। ইসলামাবাদের ‘বিতর্কিত’ লাল মসজিদের ধর্মগুরু মৌলানা আবদুল আজিজ গাজি তাঁর অনুগামীদের দিকে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন: ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে পাকিস্তানের পাশে কে কে থাকবেন? কিন্তু ঘর ভর্তি অনুগামী এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউই একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। সকলের এই নিথর নীরবতা প্রকাশ করে দিয়েছে সে দেশের সাধারণ মানুষের মনের আসল অবস্থা এবং পাকিস্তান প্রশাসনের প্রতি তাদের অনাস্থা।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এক থমথমে এবং অশান্তিপূর্ণ আবহ বিরাজ করছে। পাকিস্তান লাগাতার দাবি করছে যে, ভারত যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে। এই উত্তেজনার মাঝে পাকিস্তানের ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানগুলিতেও সম্ভাব্য যুদ্ধ এবং দেশের প্রস্তুতি নিয়ে জোরদার আলোচনা চলছে। এমনই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মৌলানা আবদুল আজিজ গাজি তাঁর অনুগামী এবং উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সরাসরি এই স্পর্শকাতর প্রশ্নটি করেন: “আমি আপনাদের একটি কথা জিজ্ঞাসা করতে চাই। বলুন তো, যদি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগে তবে আপনাদের মধ্য কতজন পাকিস্তানকে সমর্থন করবেন?”
কিন্তু প্রশ্নটি শুনে দর্শকমণ্ডলীর মধ্যে কেউ কোনো সাড়া দেননি। একটিও হাত ওঠেনি, কারো মুখ দিয়ে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। সকলের এই অস্বাভাবিক নীরবতা দেখে ধর্মগুরু আবদুল আজিজ নিজেই বলেন, “আমি এর অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম।”
অনুগামীদের এই মনোভাব বুঝতে পেরেই ‘বিতর্কিত’ এই ধর্মগুরু সুর পাল্টে পাকিস্তান প্রশাসনের তীব্র নিন্দা করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের বর্তমান ব্যবস্থার উপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এই সিস্টেমটা অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং চরম ব্যর্থ।” তিনি বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়ার মতো অঞ্চলে রাষ্ট্রের অত্যাচারের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বালোচিস্তানে যা ঘটেছে, বা পাকিস্তানে যা ঘটছে, তা ভয়াবহ অত্যাচারের নমুনা। রাষ্ট্র তার নিজের নাগরিকদের উপরই বোমা ফেলেছে।” গত ২ মে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে গেছে।
এই একটি ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানি নাগরিকদের মনে তাদের রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে কতটা অনাস্থা তৈরি হয়েছে। ভারত সম্পর্কে পাক নেতৃত্বের আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে অধিকাংশ মানুষই সমালোচনা করছেন। উল্লেখ্য, ইসলামাবাদের লাল মসজিদকে অনেকেই উগ্রপন্থী মনোভাবাপন্নদের একটি কেন্দ্র হিসেবে দেখে থাকেন। সেখানেই এমন প্রশ্ন তুলে কোনো সমর্থন না পাওয়ায় জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে সাধারণ নাগরিকরা আদৌ তাদের রাষ্ট্রকে সমর্থন করবে কিনা।
একদিকে যখন পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্ব মুখে ভারতবিরোধী কড়া কথা বলছেন (‘মুখেন মারিতং জগৎ’) এবং যুদ্ধের জন্য সবরকম শক্তি প্রয়োগের কথা বলছেন (যেমন সম্প্রতি ৪৫০ কিলোগ্রামের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার দাবি), তখন অন্যদিকে সাধারণ মানুষের এই নীরবতা এবং অনাস্থা স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে ইসলামাবাদ সম্ভবত কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে পড়েছে। সাধারণ মানুষের মনোভাব নেতৃত্বের আগ্রাসী অবস্থানের বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।