স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে গেলেন দিলীপ ঘোষ, তিন জা মিলে রাঁন্না করলেন সর্ষে ইলিশ

দুয়ারে নতুন বউ, বরণডালা হাতে অধীর অপেক্ষায় শাশুড়ি মা। চারদিকে প্রথা মেনে উলুধ্বনি আর শাঁখের আওয়াজ। পাশে শাঁখ হাতে দাঁড়িয়ে ছোট জা। নবদম্পতিকে ঘিরে সকলের মনে সীমাহীন আনন্দ আর উৎসাহ। “দিলীপ দা তা হলে সত্যিই বিয়ে করেছেন!” — শেষমেশ এই কথা মেনেই নিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের ছোট ভাই হীরক ঘোষ। সোমবার দিনভর ঠিক এমনই এক উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেল ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের কুলিয়ানায় দিলীপ ঘোষের পৈতৃক বাড়িতে। নতুন বউয়ের আগমনে এলাহি ভোজেরও আয়োজন করা হয়েছিল।

পারিবারিক মিলনমেলা ও নতুন বউ বরণ

‘ঘরের ছেলে’ দিলীপ নতুন বউকে নিয়ে আসছেন— এই খবর আগেই পৌঁছে গিয়েছিল কুলিয়ানায়। সেই শুভক্ষণে সামিল হতে পৈতৃক ভিটেয় জড়ো হয়েছিলেন দিলীপের বড় দাদা মুরারিমোহন ঘোষ, সেজ ভাই দীপক ঘোষ, ছোট ভাই হীরক ঘোষ এবং ওড়িশার বারিপাদা থেকে মামাবাড়ির আত্মীয়-স্বজনরা। নতুন বউকে স্বাগত জানানোর জন্য বাড়ির তিন বউ— প্রীতি, গঙ্গা আর সুপর্ণা সকাল থেকেই হাত মিলিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়েছিলেন। বাড়িতে পৌঁছে দিলীপের মা পুষ্পলতা ঘোষ সমস্ত রীতি মেনে নতুন বউকে বরণ করে ঘরে তোলেন।

ভাই হীরকের প্রতিক্রিয়া, বিশ্বাস হলো দাদা সত্যি বিয়ে করেছেন!

দাদার বিয়ের খবর পাওয়ার পর ছোট ভাই হীরক প্রথমে খানিকটা অবাকই হয়েছিলেন। তিনি মজা করে বলেছিলেন, “দাদা মাঝেমধ্যেই নানা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেন। নিজের চোখে না দেখা পর্যন্ত বিশ্বাসই করব না যে উনি বিয়ে করেছেন!” অবশেষে সোমবার নবদম্পতিকে একসঙ্গে দেখে তাঁর মুখে চওড়া হাসি। হীরক বলেন, “দাদা আর নতুন বউদিকে একসঙ্গে দেখে আমরা ভীষণ খুশি। এবার মনে হলো সত্যিই দাদা বিয়ে করেছেন।” তিনি নতুন বউদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে বলেন, “আমাদের নতুন বউদি খুব ভালো, খুবই মিশুকে স্বভাবের। মনে হলো মুহূর্তের মধ্যেই যেন বাড়ির সকলের মন জয় করে নিয়েছেন, সকলকে আপন করে নিয়েছেন।”

ভোজের মেনুতে আটপৌরে বাঙালিয়ানা ও ইলিশের চমক

নতুন বউয়ের আগমনে বাড়িতে জমকালো ভোজের আয়োজন ছিল। যদিও বাইরে কাঠফাটা গরম আর প্রায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল, তাই খুব কড়া পাকের রান্না এড়ানো হয়েছে। মেনুতে ছিল একেবারে আটপৌরে বাঙালি খাবারদাবার। সাদা ভাত, ডাল, নিম বেগুন ভাজা, শাক ভাজা, পটল ভাজা, বড়ি ভাজা, বেগুন ভাজা এবং এঁচোড়ের ডালনার মতো পদ ছিল। তবে এর সঙ্গে ছিল একটি বিশেষ চমক— গরম গরম সরষে ইলিশ! জানা গেছে, খোদ দিলীপ ঘোষ নিজে কলকাতা থেকে বড় আকারের তিনটি ইলিশ মাছ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। এছাড়া খাবারের শেষে সনাতনী বাঙালি মতে চাটনি আর মিষ্টির মতো পদ তো ছিলই।

নববধূর মুগ্ধতা: গ্রাম আর মানুষের প্রশংসা

নতুন শ্বশুরবাড়িতে প্রথমবার পা রাখার দিন যেকোনো নববধূর মনেই খানিকটা ভয় আর চাপা উত্তেজনা থাকা স্বাভাবিক। তবে এদিন দিলীপ ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কু ছিলেন বেশ হাসিখুশি এবং সাবলীল। বাড়ির অন্য বউদের সঙ্গে তাঁর খুনসুটি আর গল্পগুজবও চলতে দেখা গেছে। কুলিয়ানার গ্রামের শান্ত পরিবেশ দেখে তিনি বেজায় খুশি। রিঙ্কু বলেন, “আমি শুনেছিলাম ওঁর (দিলীপ ঘোষ) বাড়ি সুবর্ণরেখা নদীর ধারে। এখানে আসার আমার খুব ইচ্ছে ছিল। এখানে এসে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি চারিদিকটা ঘুরে দেখলাম, আর এখানকার মানুষগুলোও ভীষণ ভালো।”

রাজনীতি থেকে দূরে, মন্দির দর্শন ও মায়ের আনন্দ

গ্রামে প্রবেশ করে দিলীপ ঘোষ প্রথমে তাঁর কাকুর বাড়িতে যান। সেখান থেকে তিনি গ্রামের মধ্যে থাকা জগন্নাথ মন্দির এবং তাঁদের কুল দেবতা শিব মন্দিরে পুজো দিয়ে তবেই পৈতৃক বাড়িতে প্রবেশ করেন। রাজ্য রাজনীতিতে যিনি সবসময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকেন, সেই দিলীপ ঘোষ এদিন রাজনৈতিক কচকচানি থেকে শত যোজন দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। তবে, এই দিনটার জন্যই দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর মা পুষ্পলতা দেবী। আদরের ‘নাড়ু’ (দিলীপ ঘোষ) তাঁর ইচ্ছে পূরণ করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন। এদিন পুষ্পলতা দেবী বলেন, “আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। আমার চার ছেলে আর তাদের বউমা সবাই আজ একসঙ্গে বাড়িতে রয়েছে।”

এই উৎসবের আবহে দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো তাঁর পৈতৃক ভিটেতে পরিবারের সান্নিধ্যে।