“পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের সাইরেন বেজে উঠবে…!”-নির্দেশিকায় রাজ্যগুলিকে যা যা জানাল কেন্দ্র

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই থমথমে যে, যুদ্ধের জোরাল সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে। এই হামলার কড়া জবাব দিতে ভারত প্রস্তুত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, হামলাকারীদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সেই ‘কল্পনাতীত শাস্তির’ প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে।

ভারতের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK)-এর বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর কাজ শুরু করেছে পাকিস্তান। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকা ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ৭ মে, বুধবার দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ মক ড্রিলের আয়োজন করা হয়েছে। যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে সাধারণত এই ধরনের মহড়া করা হয়।  

দেশজুড়ে সিভিল ডিফেন্স মহড়া: ৭ মে ২৪৪ জেলায় প্রস্তুতি

পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় ৭ মে দেশজুড়ে এক বিশাল সিভিল ডিফেন্স মহড়ার সাক্ষী থাকবে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দেশের ২৪৪টি জেলার প্রশাসনকে এই মহড়ায় অংশগ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।

গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটক নিহত হন, যাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন নেপালের নাগরিক। ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদেরই দায়ী করেছে। এই মর্মান্তিক ঘটনার পর দেশজুড়ে এক ধরণের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সচেতন ও প্রস্তুত রাখতেই এই সিভিল ডিফেন্স মহড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মহড়ায় কী কী ঘটবে?

আগামী ৭ মে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেজে উঠবে এয়ার রেড সাইরেন। স্কুল, কলেজ, অফিস এবং জনবহুল এলাকায় মহড়া চলবে। কিছু জায়গায় সাধারণ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার অনুশীলন করা হবে। শেখানো হবে কীভাবে যুদ্ধের বা হামলার পরিস্থিতিতে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে তাদের নিজস্ব ‘ইভাকুয়েশন প্ল্যান’ তৈরি করে মহড়ার মাধ্যমে তা অনুশীলন করার নির্দেশ দিয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মহড়ায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ (NDMA), জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), রেলবোর্ড, বিমান প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যসচিবেরা অংশ নেবেন।  

পাকিস্তানের পাল্টা প্রস্তুতি ও হুমকি

পহেলগাঁও ঘটনার পর থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা (LoC)-য় টানা ১১ দিন ধরে লাগাতার গুলি চালিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এর প্রত্যেকটির উপযুক্ত জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা এখন চরমে। অন্যদিকে, পাকিস্তানও নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করছে। সীমান্ত ফাঁড়িগুলোকে আরও মজবুত করা, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো— সবই চলছে পুরোদমে। পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী প্রকাশ্যেই বলেছেন, ভারত যদি হামলা করে, তবে তার ‘কড়া জবাব’ দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তা: “পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, খুঁজে শাস্তি দেব”

পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে এই বিষয়ে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়া হয়েছে। কখন, কোথায় এবং কীভাবে জবাব দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে সেনাবাহিনীই নেবে। সূত্র মারফত জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী কড়া ভাষায় জানিয়েছেন যে, যারা পাকিস্তানের মাটিতে বসে এই হামলার ছক কষেছে, তাদের খুঁজে বের করে কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হবে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, “পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, খুঁজে বার করে শাস্তি দেওয়া হবে।”  

সামরিক পদক্ষেপের পাশাপাশি কূটনৈতিক চাপ

জঙ্গি হামলার পর ভারত শুধু সামরিকভাবেই নয়, কূটনৈতিকভাবেও পাকিস্তানকে চাপে রেখেছে। পাকিস্তানের জন্য ভারতের আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিন্ধু জলচুক্তি সংক্রান্ত আলোচনাও স্থগিত রাখা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ‘সিমলা চুক্তি’কে কার্যত স্থগিত ঘোষণা করেছে।  

জরুরি পরিস্থিতিতে আপনি কীভাবে প্রস্তুত থাকবেন?

এয়ার রেড সাইরেন শুনলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলুন।
কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্দেশিত নিরাপদ এলাকায় যান।
স্কুল বা অফিসের মহড়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন।
জরুরি প্রয়োজনে লাগতে পারে এমন নম্বরগুলো হাতের কাছে রাখুন।

পশ্চিমবঙ্গেও মহড়ার প্রস্তুতি

দেশব্যাপী এই সিভিল ডিফেন্স মহড়ায় পশ্চিমবঙ্গও অংশ নিচ্ছে। কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, দার্জিলিং, মালদার মতো একাধিক জেলায় এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নির্দিষ্ট এলাকায় আগে থেকেই সতর্কবার্তা জারি করা হবে, যাতে সাধারণ মানুষ হঠাৎ সাইরেন বা মহড়া দেখে আতঙ্কিত না হন।

আশা করি এই উপস্থাপনাটি আপনার পছন্দ হয়েছে। এটি মূল লেখাটির অর্থ ও তথ্য সম্পূর্ণ বজায় রেখে একটি নতুন আঙ্গিক দিয়েছে।