বিশেষ: ভারতের শেষ রেলস্টেশন রয়েছে বাংলাতেই, আজও মনে করিয়ে দেয় দেশভাগের ইতিহাস

ভারতীয় রেলের প্রায় ১৭০ বছরেরও বেশি সময়কালের গৌরবময় ইতিহাসে লুকিয়ে আছে কতশত অজানা গল্প! আজ আমরা আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ শহরের কাছে অবস্থিত তেমনই এক রেলস্টেশনের সাথে, যার বর্তমান অবস্থা তার অতীতের ইতিহাসের সাথে এক অদ্ভুত বন্ধনে আবদ্ধ। এটি অনেকের কাছেই ‘ভারতের শেষ রেলস্টেশন’ হিসেবে পরিচিত।

ইতিহাসের পাতায় এক ঝলক:

এই স্টেশনটির ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ এবং দেশভাগের যন্ত্রণার সাথে জড়িত।

১৮৮৪ সালে: ব্রিটিশ সেন্ট্রাল রেলওয়ে কোম্পানি বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা পর্যন্ত একটি ব্রডগেজ রেলপথ স্থাপন করেছিল। এই রেলপথটি বনগাঁ শহরের উপর দিয়েই বিস্তৃত ছিল।
১৯৪৭ সালে: ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হওয়ার পর পেট্রাপোল (ভারত) এবং বেনাপোল (বাংলাদেশ) স্টেশন দুটিকে দুই দেশের সীমান্তে নতুন করে স্থাপন করা হয়।
১৯৬৫ সালে: ভারত ও পাকিস্তানের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মধ্যে যুদ্ধের পর এই পথে দুই দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

২০০০ সালে: ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পুনরায় পণ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২০০১ সালে: এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে এই রুটে মালবাহী ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হয়।
বর্তমান চিত্র:

বর্তমানে এই ঐতিহাসিক স্টেশনটি থেকে কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন ছাড়ে না। শুধুমাত্র ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেনগুলো এই স্টেশনের উপর দিয়ে চলাচল করে। এখানে অন্যান্য ব্যস্ত স্টেশনগুলোর মতো ভিড়, কোলাহল বা ট্রেন ধরার জন্য যাত্রীদের ছোটাছুটি নেই। এক প্রকার জনশূন্য, শান্ত পরিবেশ বিরাজ করে এখানে।

তবুও, ইতিহাসের টানে বহু মানুষ আজও এই নির্জন স্টেশনটিতে আসেন শুধুমাত্র তার অতীতকে অনুভব করতে, ইতিহাসকে স্পর্শ করতে। দেশভাগের স্মৃতি, দুই বাংলার বিভেদ এবং যন্ত্রণা বুকে নিয়ে এই স্টেশনটি আজও নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।

গুরুত্ব:

ভারতের শেষ রেলস্টেশনটি কেবল একটি ইট-পাথরের কাঠামো নয়, এটি ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। এটি আমাদের ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন, দেশভাগের বেদনাদায়ক স্মৃতি এবং কোনো একদিন হয়তো আবারও এক হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে মনে করিয়ে দেয়।

আপনি কি কখনো এই ঐতিহাসিক স্টেশনটি পরিদর্শন করেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে মন্তব্য করে শেয়ার করতে পারেন।