বিশেষ: ভবিষ্যৎ নভোচারীদের ‘ঘাঁটি হতে পারে’ চন্দ্রগুহা, জেনেনিন কি বলছে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা?

সম্প্রতি চাঁদের পৃষ্ঠে খোঁজ মিলেছে অনেক গভীর একটি ভূগর্ভস্থ গুহার, যা ভবিষ্যৎ নভোচারীদের সম্ভাব্য ঘাঁটি হতে পারে, এমনই দাবি বিজ্ঞানীদের।

গবেষকদের মতে, এটি চাঁদে খুঁজে পাওয়া প্রথম ‘লুনার টানেল’, যা মানুষের জন্য প্রবেশযোগ্য হতে পারে।

ফাঁপা এ পথটির অবস্থান প্রায় একশ মিটার চওড়া এক গর্তের নীচে, যা ‘সি অফ ট্র্যাংকুইলিটি’ নামের অঞ্চলে অবস্থিত। এটি চাঁদের সম্মুখদিকের একটি অন্ধকার অঞ্চল, যা খালি চোখে দেখা যায়।

আর এ অঞ্চলটিতেই ১৯৬৯ সালে প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন।

গুহাটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য ৩০ থেকে ৮০ মিটার, প্রস্থ প্রায় ৪৫ মিটার। আর পৃষ্ঠের নীচে এর গভীরতা ১৩০ থেকে ১৭০ মিটার।

বিজ্ঞানীরা আরও যোগ করেন, এর আগে চাঁদে খুঁজে পাওয়া বিভিন্ন গুহায় প্রবেশ পথ ছিল না।

৫০ বছরেরও বেশি সময় পর নাসা চাঁদে প্রথম যাত্রীবাহি মিশন পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যেই এ ‘মাইলফলক সন্ধান’ এল।

মানুষের জীবনধারণের জন্য চাঁদ অনুপোযোগী। এমনকি এর পৃষ্ঠেও বেশ শক্তিশালী স্তরের মহাজাগতিক বিকিরণের ঘটনা দেখা যায়। তবে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, এ ধরনের চন্দ্রগর্ভস্থ গুহাগুলো ‘মানুষের বাসস্থান হওয়ার মতো উপযুক্ত’।

এ বিষয়ে ইতালির ‘ইউনিভার্সিটি অফ ট্রেন্টো’র সহকারী অধ্যাপক লিওনার্দো কেরার বলেছেন, “এই প্রথম আমরা এমন এক গুহা শনাক্ত ও সঠিকভাবে ম্যাপিং করেছি, যেখানে চাঁদের পৃষ্ঠের একটি গর্ত থেকে প্রবেশ করা যায়।”

“আমরা প্রথমবার একটি ৩ডি মডেলও বানাতে পেরেছি, যেখানে গুহাটির মূল আকারের একাংশ ফুটে ওঠে।”

“চাঁদের পৃষ্ঠে ঘাঁটি নির্মাণের ক্ষেত্রে, অত্যন্ত জটিল প্রকৌশল সমাধান প্রয়োজন। তবে, এরইমধ্যে প্রাকৃতিকভাবে সরবরাহ করা সমাধানের তুলনায় এর কার্যকারিতা কম হতে পারে।”

ইউনিভার্সিটির আরেক অধ্যাপক লরেঞ্জো ব্রুজোন যোগ করেন, “এ ধরনের গুহা নিয়ে তাত্ত্বিকভাবে গবেষণা চলেছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। তবে, এই প্রথম আমরা এদের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছি।”

চাঁদের পৃষ্ঠে মহাজাগতিক বিকিরণের মাত্রা পৃথিবীর তুলনায় দেড়শ গুণ বেশি শক্তিশালী।

এমনকি ঘন ঘন উল্কাপাতের প্রভাব ও ১২৭ থেকে ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত চরম তাপমাত্রার কারণেও এ পৃষ্ঠটি ঝুঁকিপূর্ণ।

এর আগের বিভিন্ন গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, চাঁদের ভুগর্ভস্থ বিভিন্ন গুহার গড় তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা নভোচারীদের জন্য আদর্শ পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত।

এ গবেষণা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ওপেন ইউনিভার্সিটি’র ‘প্ল্যানেটারি সায়েন্স অ্যান্ড এক্সপ্লোরেশন’ বিভাগের অধ্যাপক মাহেশ আনান্দ বলেছেন, “ভবিষ্যতের বিভিন্ন মিশনে চাঁদে মানুষের উপস্থিতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ ও ছোট ছোট উল্কার প্রভাব থেকে সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা রাখতে হবে।”

“সেক্ষেত্রে এইসব ভূগর্ভস্থ কাঠামো মানুষের বাসস্থান হওয়ার উপযুক্ত জায়গা হয়ে উঠতে পারে।”

চাঁদের ভূগর্ভস্থ গুহাগুলো আসলে বিভিন্ন ‘আদিম লাভার টিউব’, যেগুলো কয়েকশ কোটি বছর আগে অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল।

আর চাঁদে গর্তের সৃষ্টি হয়, যখন লাভা টিউবের প্রবেশদ্বার ভেঙে নীচের দিকে দেবে যায়।

বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার অ্যাস্ট্রনমি’তে প্রকাশিত এ গবেষণায়, গবেষকরা নাসার মহাকাশযান ‘লুনার রিকনিস্যান্স অরবিটার’-এর ২০০৯ সালে সংগ্রহ করা তথ্য নতুন করে আবারও বিশ্লেষণ করে দেখেছেন।